Hungry to Know

Friday, October 25, 2019

সহজ কথায় SEO (Search Engine Optimization)

অনলাইনে কোন তথ্য, লিংক বা কন্টেন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য পৃথিবীব্যপী প্রায় সবাই একটি সার্চ ইঞ্জিনের (Search Engine) দারস্থ হই। তা হচ্ছে গুগল (Google.com)। গুগলের মতো আরও একাধিক সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে যদিও, তবু গুগলকে বর্তমান সময়ের সবার্ধিক জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন বলা যায় নির্দ্বিধায়। ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রতি বছর যত সার্চ হয় তার প্রায় ৮৮ ভাগ সার্চ গুগলের মাধ্যমে হয়।

এই গুগল-এ যখন আমরা কোন কিছু সার্চ করি তখন খুব অল্প সময়েই অনেক সার্চ রেজাল্ট (Search Results) আসে, হাজার হাজার রেজাল্ট, তাই না? এতো বেশি রেজাল্ট আসে যে সেগুলো গুগল নামক সার্চ ইঞ্জিনটি কয়েকটি আলাদা পাতায় (Page)-এ ভাগ করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।

এখন বলুন তো এই যে গুগল এতো কষ্ট করে এতো রেজাল্ট খুঁজে এনে রাখলো আমাদের সামনে, কিন্তু আমরা কতক্ষণ বা ঠিক কতগুলো পেজ দেখে দেখে আমাদের কাংখিত ফলাফল নির্বাচন করি? যেমন আমার কথাই যদি বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি প্রথম পাতার বেশি যাই-ই না, যদি না তেমন কোন বিশেষ প্রয়োজন থাকে। এবং নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় আপনিও ঠিক একই কাজ করেন। 😉



কারণ আমরা জানি:
  • প্রথম দিকে যে ওয়েবসাইট বা লিংকগুলো আসে সেগুলো বেশি পপুলার। বেশি মানুষ সেগুলো ব্যবহার করে। অতএব উক্ত সার্ভিসগুলোর উপর নির্ভর করা যায়।
  • প্রথম দু-তিনটি ওয়েবসাইট বা লিংকগুলোর ভেতরেই যদি আমি আমার কাংখিত ফলাফল পেয়ে যাই তাহলে কেন পরেরগুলোতে যাব?
  • আমাদের সময় কম, ধৈর্য্য কম এবং অনেক ব্যস্ততা। অর্থাৎ বেশি যাচাই করার সময় নেই।
আপনি আমি সাধারণ মানুষ, আমরা অত-শত ভাবি না, অতএব কখনো এই অতি সাধারণ ব্যপারটা নিয়েও এভাবে ভাবিনি। কিন্তু টেকনোলজি নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এই ব্যপারটি লক্ষ্য করেছেন যে - একজন ব্যবহারকারী প্রথম পাতাতেই তার কাংখিত রেজাল্টটি খুঁজে নেন এবং তা বেশিরভাগ সময়ই হয় প্রথম দুই থেকে পাঁচটি রেজাল্টের মধ্যেই। এই সিদ্ধান্তটি নিতে হয়তো তারা বড়জোর ১০-১৫ সেকেন্ড সময় ব্যয় করেন, তারপর কাংখিত লিংকে ক্লিক করে সেখানে চলে যান। তাহলে বাঁকি যে হাজার হাজার সার্চ রেজাল্ট পরে থাকলো, সেগুলো স্রেফ নজরের বাইরে থেকে গেলো।

এবার আপনি নিজেকে ভাবুন একটি ওয়েবসাইটের মালিক হিসেবে। আপনার ওয়েবসাইটটির কার্যক্রম যদি এমন হয় যে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবহারকারীর বাইরেও আরও যত বেশি মানুষ আপনার ওয়েবসাইটটি দেখবে ততই আপনার জন্য মঙ্গল। তাই যদি হয় তবে আপনাকে তো হাজার হাজার সার্চ রেজাল্টের পেছনে পরে থাকলে চলবে না, এমনকি দ্বিতীয় পেজ-এ থাকলেও চলবেনা। আপনার ওয়েবসাইটটি মানুষের নজরে আসতে হবে, সার্চ ইঞ্জিনের গণনায় প্রথম দিকেই আসতে হবে, তাই না? ঠিক এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ওয়েবসাইট মালিকদের পক্ষ থেকে জন্ম নিতে থাকলো নানান রকম ফন্দি-ফিকির বা চালাকি বা টেকনিক যেগুলোর সমন্বিত রূপ-ই বর্তমানে Search Engine Optimization বা SEO নামে পরিচিত।

একটি সার্চ ইঞ্জিনের বিশেষ ক্রলার (Crawler) বা বট (Bot) প্রোগ্রাম থাকে যে কিনা সারাক্ষণ ওয়েব দুনিয়ায় বা ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়ায় আর (নতুন নতুন অথবা আপডেটকৃত) ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজ পরখ করে নিজের ঝোলায় ভরতে থাকে। একে আমরা ইনডেক্সিং (Indexing) করা বলতে পারি। তো এই ক্রলার বা বটের নজরে পড়ার জন্য ও সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকে স্থান পাওয়ার জন্য শুরু হলো পৃথিবীব্যাপী এক ইঁদুর দৌড়। এই দৌড় দিতে যেয়ে কেউ সোজা পথে দৌঁড়ালো, আবার কেউ বাঁকা পথ বা শর্টকাট বেঁছে নিতে থাকলো। ওয়েবভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা বা সেবাদাতাদের জন্য বিষয়টা এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো যে সার্চ ইঞ্জিনের নজরে পড়া না পড়ার উপরে তাদের লাভ-লোকসান ও বাজারে টিকে থাকা-না থাকা নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। ক্রলার (Crawler) বা বট-কে বোকা বানানোর জন্য নানান রকম চালাকি করা হতে লাগলো। কিন্তু সার্চ ইঞ্জিনগুলোও তো আর বলদ না, তারাও বসে থাকলো না। ওয়েব দুনিয়ায় মানুষের নানান প্রবণতাকে অনুধাবন করে তারাও নিজেদের প্রোগ্রাম ও অ্যালগোরিদমে সময়ের সাথে সাথে নানান পরিবর্তন আনতে লাগলো যেন কেউ অবৈধভাবে বেশি সুযোগ না নিতে পারে, বা স্বাভাবিক ফলাফলকে প্রভাবিত না করতে পারে। সবমিলিয়ে বর্তমান জমানায় এই খেলাটাই এখন চলছে। ক্রলার বটগুলো এখন আতীতের চাইতে আরও অনেক বেশি কঠোর ও জটিল, এবং নানারকম নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলছে। তাই SEO নিয়ে যারা কাজ করে তাদের কাছে পুরোনো নিয়ম বাদ দিয়ে নতুন কোন নিয়ম অনুসরণ করা খুব স্বাভাবিক একটা প্র্যাকটিস।

প্রতিনিয়ত ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে SEO, যা নিজে নিয়মিত আপডেট থাকার ও ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট রাখার দাবী রাখে। শুধুমাত্র প্রথম পাতায় উঠে আসা নয়, এখন ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স অপটিমাইজেশনের সাথেও SEO-র সংযোগ আছে। লোডিং টাইম বেশি, কন্টেন্ট অগোছালো এমন ওয়েবসাইট ক্রলার বা বট প্রোগ্রামগুলোর কাছে পছন্দণীয় না। এমন অনেক অনেক বিষয় নিয়ে সময়ের দাবীতে শুধুমাত্র SEO সার্ভিস প্রদান করার জন্যই গড়ে উঠেছে অনেক বড় বড় ফার্ম। যদি ক্যারিয়ার হিসেবে বলি তাহলে ‍SEO নিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার সুযোগ তো রয়েছেই, তাছাড়াও বিগত কয়েক বছরে চাকুরীর বাজারেও সরাসরি SEO Professionals দের জন্য Job Opportunity তৈরি হয়েছে।

এবার একটু টেকনিক্যাল টার্মে যাই-

এসইও-কে মোটা দাগে দুাটি ভাগে ভাগ করা যায়:
1. On-page optimization
2. Off-page optimization

অনপেজ অপটিমাইজেশন : ওয়েবসাইটের ভেতরে, ওয়েবপেইজ সমূহে বা কোডিং লেভেলে যে অপটিমাইজেশনগুলো করা হয়।

অফপেজ অপটিমাইজেশন : ওয়েবসাইট বানানো হয়ে যাওয়ার পর মূলত ভিসিটর বা ট্রাফিক আনার জন্য, কনভার্সন বাড়ানোর জন্য যে টেকনিকগুলো অ্যাপ্লাই করা হয়।

তাছাড়া SEO করতে বসলে করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরী। বলা যায় সার্চ ইঞ্জিন ক্রলার বা বট পছন্দ করে না, নিয়ম-নীতির বরখেলাপ হয় এমন কিছু না করাই ভালো। করা যাবে না তা নয়, কিন্তু তাতে হয়তো সাময়িক ফল পাওয়া যায়, কিন্তু লম্বা সময়ের জন্য হলে, তা না করাই ভালো। যেমন ওয়েবসাইটের রেপুটেশন বিল্ড করতে চাইলে, ব্র্যান্ড ইমেজ দাঁড় করাতে চাইলে দুর্নীতির রাস্তায় না যাওয়াটাই বেটার। এই মন্দ কাজ ও ভালো কাজের ধারণাগুলোকে ব্ল্যাক-হ্যাট SEO, হোয়াইট-হ্যাট SEO বলে।

একজন ভালো এথিক্যাল SEO Specialist বা সার্ভিস প্রোভাইডারের লক্ষ্য থাকবে মূলত বেশি বেশি ট্রাফিক আনা, সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্সড হওয়া ও ভুল-ভ্রান্তি করে শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাক লিস্টেড না হওয়া।

যদি শিখতে চাই?
আগেই বলেছি ‍SEO টেকনিক কিছু দিন/মাস/বছর পরপরই সার্চ ইঞ্জিনের মর্জিমাফিক পরিবর্তন হয়। অতএব সুনির্দিষ্টভাবে ‘এটা এটা করা যাবে, ওটা ওটা করা যাবেনা’ বলা মুশকিল। আপনি যদি একবছর আগের রিসোর্স নিয়ে এক বছর পরে শিখতে বসেন তবে সেই রিসোর্স ফেলে দিয়ে নতুন করে রিসোর্স জোগাড় করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। হ্যাঁ তারপরেও সবকিছু তো আর রাতারাতি বাতিলের খাতায় পড়ে যায় না, অতএব পুরোনো কিছু নিয়মও চলমান থাকে। যেমন SEO-র প্রায় পুরো ধারণা বা কর্মকান্ড শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে কি-ওয়ার্ড রিসার্চের (Key-Word Research) উপর। কি-ওয়ার্ড রিসার্চ ও সেই কি-ওয়ার্ডের সঠিক পরিমাণে (যথেচ্ছ নয়!) ব্যবহারের উপর SEO-র প্রায় পুরো ব্যপারটাই দাঁড়িয়ে আছে বলা যায়। তারপর যেমন লিংক বিল্ডিং (Link Building or Backlinks)। এমন অনেকেই রয়েছে যারা অনলাইনে শুধু মাত্র লিংক বিল্ডিংয়ের কাজই করেন। এই লিংক বিল্ডিং-ও SEO-র একটা অংশ। আসলে SEO হচ্ছে এমন অনেক ছোট-বড় কাজের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটা বড় ক্ষেত্র, যার সাথে এখন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি একে অন্যের সাথে কম-বেশি জড়িয়ে রয়েছে। SEO কে তো ডিজিটাল মার্কেটিং-এর জনকই বলা যায়।

কেন জানা প্রয়োজন?
বর্তমানে একটি ওয়েবসাইট তৈরি ও পরবর্তী সময়ে SEO-র ব্যপারগুলোও মাথায় রাখতে হয়, যা ওয়েবসাইটের ভালো পারফর্মেন্স ধরে রাখতেও অনেকটা সহায়ক। ওয়েবসাইট শুধু বানিয়ে নিলেই তো হবে না, ওয়েবসাইটের মালিক এটাও আশা করেন যে মানুষ তার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবে। অতএব আপনি এখন ওয়েব ডেভেলপার হন, বা শুধুমাত্র SEO সার্ভিস প্রোভাইডার হন, কিংবা ওয়েবসাইটের মালিক হন, প্রত্যেককেই SEO নিয়ে যার যার মতো করে ভাবতে হচ্ছে, জানতে হচ্ছে।


© A.S.M. Shahriar Zahan | www.shahriarz.net

লাস্ট আপডেট: ২৬ অক্টোবর, ২০১৯

No comments:

Post a Comment