Hungry to Know

Saturday, January 26, 2019

ওয়েবসাইট চাই, কিন্তু কিভাবে কি করবো?


ওয়েব সাইট কি ও কেন প্রয়োজন এটা আমরা ইতিমধ্যেই জেনে নিয়েছি। অনেকেই নিজের বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকার গুরুত্ব বুঝে গেছেন। এই মুহূর্তে অনেকেই আছেন যারা একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটের কথা ভাবছেন ও জানতে চান কিভাবে কাজটি শুরু করা যেতে পারে। যদিও বিষয়গুলো প্রযুক্তি নির্ভর, তবুও এই লেখাটির মাধ্যমে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা যাক। যারা জটিল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে বেশি সময় না দিয়ে মূল বিষয়টা বুঝতে চাচ্ছেন তারা এই লেখাটির মাধ্যমে উপকৃত হবেন আশা করি।

কাজ করতে গিয়ে সামান্য যে অভিজ্ঞতাটুকু হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে লেখাটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেয়া যাক -

প্রথম ধাপ: কি ধরণের ওয়েবসাইট চাই, কি কি সুবিধা চাই
দ্বিতীয় ধাপ: নিজে নাকি ওয়েব ডেভেলপার?
তৃতীয় ধাপ: ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়ে একটু জানাশোনা
চতুর্থ ধাপ: আলোচনা ও অ্যাগ্রিমেন্ট
...
ওয়েবসাইট আন্ডার কন্সট্রাকশান...
...
পঞ্চম ধাপ: ওয়েবসাইট বুঝে নেয়া

প্রথম ধাপ: কি ধরণের ওয়েবসাইট চাই, কি কি সুবিধা চাই

একটি ওয়েবসাইট বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আপনাকে (ডেভেলপমেন্টের ভাষায় আপনি হচ্ছেন ক্লায়েন্ট) প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে তা হলো ওয়েবসাইটটিতে কি কি সুযোগ সুবিধা বা ফিচার (Features) আপনি চাচ্ছেন। একজন ক্লায়েন্ট (Client)-এর প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট হলে এক এক রকম সুযোগ-সুবিধা থাকবে আবার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট হলে অন্যরকম সুযোগ-সুবিধা থাকবে। একজন ফটোগ্রাফারের ওয়েবসাইট হবে একরকম আবার একটি বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হবে আলাদা রকমের।

আপনার ওয়েবসাইটটিতে কি কি সুবিধা বা অপশন থাকতে হবে এমন ভাবনা বা চাহিদাগুলি একটি সাদা কাগজে তালিকাবদ্ধ করে ফেলুন। ডেভেলপারদের খটমটে ভাষায় একে ক্লায়েন্ট রিকয়ারমেন্ট (Client Requirements) বলে। একদম নিখুঁত টেকনিক্যাল রিকয়ারমেন্ট একজন নন-টেকনিক্যাল ক্লায়েন্ট-এর কাছে কেউ আশা করে না, কিন্তু অন্তত কি ধরণের ওয়েবসাইট হতে যাচ্ছে এবং এতে কি কি ফিচার বা সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে এটা আপনার ভাষায় খসরা করে ফেলুন। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা ওয়েব ডেভেলপার-এর দায়িত্ব।

আবার আপনি যদি নিজেই ওয়েবসাইটটি বানাতে চান তবুও সেই কাজটিও শুরু হবে এই প্রাথমিক রিকয়ারমেন্ট ঠিক করার মধ্য দিয়েই। অতএব রিকয়ারমেন্টগুলো মোটামুটি নিজের কাছে পরিস্কার করে ফেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতএব দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আগে আপনার জন্য ছোট্ট একটি অ্যাসাইনমেন্ট হচ্ছে একটা রিকয়ারমেন্ট লিস্ট বানিয়ে ফেলা।

দ্বিতীয় ধাপ: নিজে নাকি ওয়েব ডেভেলপার?

দ্বিতীয় ধাপটি খুব ছোট। তা হলো ওয়েবসাইটটি আপনি নিজে বানাতে চান নাকি কোন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপারকে দিয়ে বানিয়ে নিতে চান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। ওয়েবসাইটটি যদি আপনি নিজে বানাতে চান সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায় আপনি ওয়েবসাইট বানানোর বিষয়গুলোর ভেতর-বাহির সন্বন্ধে ওয়াকিবহাল। অতএব সেই দিকে যাব না। ধরে নিচ্ছি আপনি ওয়েবসাইটটি নিজে বানাতে চাননা। চলুন তবে তৃতীয় ধাপে যাওয়া যাক।

তৃতীয় ধাপ: ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ডোমেইন ও হোস্টিং 

এই ধাপে আপনার কাজ হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার মিনিমাম প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করা। ওয়েবসাইট বানানোর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন যে তিনটা মৌলিক বিষয় আমলে নিতে হয় তা হলো -
  • ৩.১. ওয়েবসাইটটি তৈরি করা (ওয়েবসাইট ডিজাইন / ডেভেলপমেন্ট) (Web Design & Development)
  • ৩.২. একটি ডোমেইন নেম রেজিষ্ট্রেশন করা (Domain Registration)
  • ৩.৩. ওয়েবসাইটটি একটি সার্ভারে হোস্ট বা আপলোড করা (Web Hosting)

তিনটা বিষয় নিয়ে সামান্য পড়াশোনা এখানেই করে নেয়া যাক-

৩.১. ওয়েবসাইটটি তৈরি করা (ওয়েবসাইট ডিজাইন / ডেভেলপমেন্ট)

ওয়েবসাইট তৈরি করা একটি উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল কাজ। এর জন্য প্রোগ্রামিং বা কোডিং জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কমপক্ষে এইচটিএমএল (HTML) ও সিএসএস (CSS) এর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। সেই সাথে জাভাস্ক্রিপ্ট (Javascript)-ও জানার প্রয়োজন পড়বে। এরপর আর একটু সামনে এগুলেই একটি সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ যেমন পিএইচপি (PHP) (এমন ল্যাংগুয়েজ আরও আছে) ও ডাটাবেজ (Database) (কুয়েরী ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন পড়বে। খুব কাটছাট করে হলেও এ কয়টা জিনিস জানার প্রয়োজন পড়বেই।

প্রোগ্রামিং (Programming) বা কোডিং (Coding) জ্ঞান ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি করার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনও হয়তো ইতিমধ্যেই আপনার চোখে পড়েছে, কিন্তু সেই কাজটি যে টুল (Tool) বা অ্যাপ্লিকেশন (Application) ব্যবহার করে করা হয় সেটিও কোন না কোন প্রোগ্রামিং ভাষা দ্বারাই তৈরি করা হয়েছে। এসব টুল বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব অবশ্যই, কিন্তু ডেভেলপমেন্ট-এর পুরোপুরি স্বাধীনতা ও স্বাদ পেতে হলে এবং ইচ্ছেমত কাজ করতে হলে প্রোগ্রামিং বা কোডিং জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

যাইহোক, আপনি নিজে না করে যদি কোন প্রফেশনাল ডিজাইনার/ডেভেলপারকে দিয়ে কাজটি করাতে চান তো সেক্ষেত্রে এই মাথাব্যথা ডেভেলপারের। আর আপনি নিজে করতে চাইলে প্রোগ্রামিং বা কোডিং ল্যাংগুয়েজগুলো জানতে হবে বা অথবা যে টুলস বা অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে চান সেটি সন্বন্ধেও সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে, ও তারপর সেগুলো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

এখানে এসে আপনার মনে হতে পারে যে - ভাই আপনি নিজে নিজে ওয়েবসাইট বানিয়ে নেয়াটাকে এতো জটিল করে বলছেন কেন? ভয় দেখাচ্ছেন নাকি, যেন আপনাকে দিয়ে সবাই ওয়েবসাইট বানিয়ে নেয়?

হা হা হা! আসলে ব্যপারটা সেরকম না। বরং নিজে করতে পারলে আপনার খরচ বাঁচবে এবং নতুন একটি বিষয় শেখাও হবে। নিজে নিজে করার আরেকটা ভালো দিক হলো ডেভেলপারদের পরিশ্রমটা আপনি কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারবেন... 😊।

আরও দুটি বিষয় হচ্ছে স্ট্যাটিক ও ডাইনামিক ওয়েবসাইটস্ট্যাটিক ওয়েবসাইট সাধারনত: কিছু পরিচিতিমূলক তথ্য দেখানোর জন্য ভালো। এই তথ্যগুলো খুব বেশি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়না। তথ্যগুলো সরাসরি হার্ড কোডেড অবস্থায় রাখা হয়, পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে ওয়েবসাইটের সোর্স ফাইলগুলো ওপেন করে এডিট করে নিতে হয়। ইউজার লগিন, কোন ধরণের ফর্ম সাবমিশন বা ব্যাকএন্ড ডাটাবেজ এই ধরণের ওয়েবসাইটে থাকে না। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট বানানোর খরচ তুলনামূলক কম, খুব একটা মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজনও হয় না। এই ধরণের ওয়েবসাইটের উদাহরণ হতে পারে একটি কোম্পানীর পরিচিতি মূলক ওয়েবসাইট, যেখানে প্রতিদিনই হয়তো নতুন তথ্য যোগ করার কোন প্রয়োজন নেই। যদিও স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট এখন আর তেমন দেখা যায়না বললেই চলে।
 
ডাইনামিক ওয়েবসাইটে ইউজার লগিন, কোন ধরণের ফর্ম সাবমিশন বা ব্যাকএন্ড ডাটাবেজ এই ধরণের সুবিধা থাকে এবং ইউজারের রিকোয়েস্ট অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রদর্শন করা হয়। ডাইনামিক ওয়েবসাইট সমূহের সাধরণত একটি ব্যাকএন্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশান প্যানেল তাকে, যেখান থেকে তথ্য যোগ বিয়োগ বা পরিবর্তনের কাজগুলো একজন সাধারণ ব্যবহারকারী সহজেই করতে পারে। এই ধরণের ওয়েবসাইটের উদাহরণ হতে পারে একটি নিউজপেপার ওয়েবসাইট, যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে বা বিয়োগ হচ্ছে। যদিও ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা তুলনামূলক ব্যয়বহুল, তবে ডেভেলপমেন্ট পরবর্তী তথ্য-আদানপ্রদানের কাজগুলো করা সহজ বিধায় বর্তমান পৃথিবীতে ডাইনামিক ওয়েবসাইটের কাজই বেশি হচ্ছে।
  

৩.২. একটি ডোমেইন নেম রেজিষ্ট্রেশন করা

ধরা যাক আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়ে গেছে। এবার আপনার একটি ডোমেইন নেম (Domain Name) বা ওয়েবসাইট ঠিকানা (Website Address) দরকার হবে। ডোমেইন নেম হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের নাম। যেমন www.facebook.com বা www.wikipedia.com – এখানে ফেসবুক বা উইকিপিডিয়া অংশগুলো হচ্ছে ওই ওয়েবসাইট গুলোর বহুল প্রচলিত নাম, বলা চলে ডাকনাম। আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের জন্যও এমন একটি চমৎকার নাম বেছে নিতে হবে আপনাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে নামটি যেন সহজ ও ছোট হয়। এবং নামটি অবশ্যই এমন হতে হবে যা ইতিমধ্যেই অন্য কেউ রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেনি। ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন করার ব্যপারে আপনাকে আপনার ডেভেলপার-ই সাহায্য করতে পারে অথবা এই কাজটি করে এমন কোন হোস্টিং কোম্পানীর সাথে আপনি নিজেও যোগাযোগ করতে পারেন।

৩.৩. ওয়েবসাইটটি একটি সার্ভারে হোস্ট বা আপলোড করা

হার্ডওয়্যার (Hardware) ছাড়া কম্পিউটারের কাছে সবকিছুই কিছু ফাইলের (Files) সমষ্ঠি ও এর ভেতরে লেখা থাকা কিছু নির্দেশনাসমূহ (Instructions)। একটি ওয়েবসাইট যখন বানাবেন তখন সেখানেও কিছু ফাইলের সৃষ্টি হবে, যার ভেতরে সোর্স কোড বা ইন্সট্রাকশনগুলি লেখা থাকে। এখন আপনার কম্পিউটারে রাখা ফাইল তো আর পৃথিবীব্যপী মানুষ দেখতে পাবে না, যদি তেমন ব্যবস্থা না করা হয়। সহজ উপায় হচ্ছে এক্ষেত্রেও কোন একটি হোস্টিং কোম্পানীর কাছে যাওয়া। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো তাদের ওয়েব সার্ভারে রাখতে পারি যেন পৃথিবীব্যাপী মানুষ আমার ওয়েবসাইটটি দেখতে পায়, এবং এই প্রকৃয়াটিকেই ওয়েবসাইট অনলাইনে হোস্ট করা বলে। এমন অনেক দেশি-বিদেশি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানী (Hosting Company) আছে। এ ব্যাপরেও আপনার ডেভেলপারই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে, অথবা আপনি নিজেই আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন কোম্পানির কাছে যেতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কোম্পানি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েবসাইট হোস্টিং - দুটি সার্ভিসই প্রদান করে থাকে।

তো মূলত তিনটি মৌলিক ব্যপার নিয়ে তো আলোচনা হলো। এছাড়াও আরও দুটি বিষয় আছে যা তর্কের খাতিরে হয়তো একেবারে প্রাথমিক বিষয় হিসেবে মর্যাদা না পেলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো:
  • ৩.৪. ওয়েবসাইট-এর কন্টেন্ট (Content)
  • ৩.৫. ওয়েবসাইট-এর সিকিউরিটি (Security) ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট (Tech Support)

৩.৪. ওয়েবসাইট-এর কন্টেন্ট

কন্টেন্ট-এর বিষয়টি অনেকেই ধর্তব্যের মধ্যে রাখেন না কিন্তু একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে যাওয়ার পর যখন অনলাইন-এ দেয়ার সময় আসে তখন এই প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট পাওয়া-ই সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কন্টেন্ট হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটটি সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য (লেখা, ছবি, ভিডিও, ইত্যাদি)। কন্টেন্ট সাধারণত ডেভেলপাররা তৈরি করে দেয় না, তারা বড়জোর ডেমো (Demo) কিছু কন্টেন্ট বসিয়ে তাদের কাজ সেরে নেয়, কিন্তু মূল কন্টেন্ট বা যাবতীয় তথ্য আপনাকেই জোগান দিতে হবে। এখন এই কন্টেন্ট যদি আপনি নিজে না দিতে পারেন তবে কন্টেন্ট বানিয়ে দেয়ারও বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যক্তি আছে, অথবা আপনার ডেভেলপারও আপনাকে এ ব্যপারে সাহায্য করতে পারে যদি সে সেটা করতে আগ্রহী থাকে এবং অ্যাগ্রিমেন্ট এ তা উল্লেখ করা থাকে।

৩.৫. ওয়েবসাইট-এর সিকিউরিটি ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট

একটি চলমান ওয়েবসাইট-এর জন্য বর্তমান জমানায় অন্যতম মাথাব্যথার বিষয় হচ্ছে এর সিকিউরিটি। এর কিছু ব্যপার হোস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রাতষ্ঠানের দেখভালের বিষয় আবার কিছু বিষয় আছে যা ওয়েবসাইটটি যে বা যারা পরিচালনা করবে তাদের উপর নির্ভর করে। সিকিউরিটি যদি ঠিক মতো না থাকে তবে আপনার সাইটটি হ্যাক হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক অনাকাংখিত যন্ত্রণার সৃষ্টি হতে পারে।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট-এর ব্যপারটি হলো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। এটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance) করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন নিয়মিত ব্যাকআপ (Backup) রাখা, নতুন তথ্য যোগ ও পুরানো তথ্য হালনাগাদ (Update) করা, সময় মত ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও হোস্টিং সার্ভিস রিনিউ (Renew) করা, নতুন কোন ফিচার বা সুবিধাদি যোগ করা, কোন বাগ (Bug) বা সমস্যা ধরা পড়লে সেগুলো সমাধান করা, ইত্যাদি। এর জন্য ওয়েবসাইট ডেলিভারি হয়ে যাওয়ার পড়েও সাপোর্ট-এর প্রয়োজন হয়। এই সাপোর্ট ফ্রি (Free) হতে পারে আবার পেইড (Paid)-ও হতে পারে, এটা নির্ভর করে ডেভেলপার-এর সাথে আপনার অ্যাগ্রিমেন্ট (Agreement)-এর উপর।

চতুর্থ ধাপ: আলোচনা ও অ্যাগ্রিমেন্ট

অনেক আলোচনা হলো। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ডোমেইন রেজিস্ট্রেশান, ওয়েব হোস্টিং নিয়ে পড়ােশোনাও শেষ। এবার শুরু হবে কাজ।

এবার প্রথম ধাপে আপনার বানানো রিকয়ারমেন্ট লিস্টটি নিয়ে ওয়েবসাইট ডেভেলপারের (Website Developer বা Web Developer) সাথে আলোচনায় বসুন। প্রাথমিকভাবে দু-তিনটি মিটিংয়েই ডেভেলপার আপনার কাছে আপনার আইডিয়া (Idea) বুঝে নিয়ে আপনাকে একটি প্রাথমিক ডিজাইন (Initial Design) বা ডেমো প্রদর্শন করবে। এরমধ্যে বাজেট, পেমেন্ট মাইলস্টোন (Payment Milestones), ডেভেলপমেন্টে টাইমলাইন (Timeline) ও ডেডলাইন (Deadline) নিয়েও আলোচনা হয়ে যাবে। চেষ্টা করবেন রিকয়ারমেন্টগুলো কাজের শুরুতেই যতটা সম্ভব পরিস্কার করে নেয়া, ডেমো ভার্সন ফাইনাল হওয়ার আগ পর্যন্ত যতবার পারুন যতটা পারুন নিজের চাহিদাগুলো ডেভেলপারের সাথে খোলাসা করে ফেলুন। মূল কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে বা কিংবা মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর রিকয়ারমেন্ট পরিবর্তন করাটা কখনো কখনো অনেক বড় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ও কাজটির উপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শেষে সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এবার ডেভেলপারের সাথে একটা লিখিত অ্যাগ্রিমেন্ট-এ যান অথবা ডেমো দেখুন। আগে ডেমো নাকি আগে অ্যাগ্রিমেন্ট - এটা নির্ভর করে ডেভেলপারের সাথে আপনার সম্পর্কের উপরে।

অ্যাগ্রিমেন্ট-এ অনেক কিছুই থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে, তবে মূল যে জিনিসগুলো উল্লেখ করা থাকে তা হলো -
  • কি ধরণের সাইট হবে এবং এবং কি কি ফিচার থাকবে
  • কি টেকনোলজি বা টুলস বা প্লাটফরম (Platform) ব্যবহার করা হবে
  • কি কি ডেলিভারেবলস্ (Deliverables) থাকবে
  • প্রোজেক্ট টাইমলাইন ও ডেলিভারি ডেডলাইন
  • ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও হোস্টিং কে প্রোভাইড করবে, কত দিনের জন্য
  • বাজেট বা কস্টিং, পেমেন্ট মেথড ও পেমেন্ট মাইলস্টোন
  • ডেভেলপমেন্ট পরবতী ট্রেইনিং / সাপোর্ট কিভাবে কি টার্মে কতদিন প্রোভাইড করা হবে, সেটা ফ্রি নাকি পেইড হবে, ফ্রি হলে কতদিন ফ্রি ইত্যাদি বিষয় সমূহ
  • উভয়পক্ষের সম্মতি ও সই-স্বাক্ষর

পঞ্চম ধাপ: ওয়েবসাইট বুঝে নেয়া

এই ধাপে ইতিমধ্যেই ডেভেলপার আপনার কাছে কাজ বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কাজ চলাকালীন এই সময়টায় নিয়মিত ডেভেলপারের সাথে যোগাযোগ রাখুন, অবশেষে কাজ হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইট বুঝে নিন। সাইটের ডেভেলপমেন্ট পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ-এর কাজ যদি আপনি নিজেই করতে চান সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের যাবতীয় লগিন ডিটেইলস বুঝে নিন। ওয়েবসাইটটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় টেইনিং-ও ডেভেলপারের কাছে নিয়ে নিতে পারেন।

এভাবে একটি ওয়েবসাইটের গর্বিত মালিক হউন! নিজের ফোন বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেসের সাথে সমানতালে ওয়েবসাইট ঠিকানাটিও সবার সাথে গর্বের সাথে শেয়ার করতে থাকুন।

বোনাস অংশ

পুরো লেখাটা পড়ার সময় যে প্রশ্নটি অনেকের মাথায় ঘুরতে থাকবে তা হলো – ভাই এই ওয়েবসাইট-এর ব্যাপার স্যাপার ফ্রিতে পাওয়া যাবে না?

আলবাৎ যাবে! এখন সময়টাই ফ্রি-এর সময়। প্রযুক্তির বাজারেও এই ফ্রি কালচারের বিশাল চাহিদা রয়েছে বৈকি। ওয়েবসাইটও ফ্রি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু……..।

এটি নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি নোট লিখে ফেলবো ইনশাআল্লাহ! সবুর করুন। সবুরে এ ধাক্কায় মেওয়া না ফললেও একেবারে খালি হাতে ফিরতে হবে না।


© A.S.M. Shahriar Zahan | www.zahantech.com

[Photo by olia danilevich from Pexels.com]

পূর্ববর্তী পর্ব: ওয়েব সাইট কী? কেন প্রয়োজন?
পরবর্তী পর্ব: ওয়েবসাইটও ফ্রি পাওয়া যায়, কিন্তু...

No comments:

Post a Comment