Hungry to Know

Sunday, April 19, 2020

আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে পৃথিবীতে মোট ওয়েবসাইটের সংখ্যা কত? আমি যখন দেখছিলাম তখন সংখ্যাটা ছিল - 1,764,071,065, মানে ১৭৬ কোটিরও বেশি! এবং প্রতি সেকেন্ডে এই সংখ্যাটা বাড়ছে। অর্থাৎ আপনি যখন দেখবেন তখন কত হবে বলা মুশকিল।

তো এই বিশাল সমুদ্রে মাত্র কিছু ওয়েবসাইটের কথা বলা অনেক কঠিন একটি কাজ, কিছুটা অনুচিৎ-ও বটে। কারণ তাতে আপনি হয়তো এই তালিকার মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ফেলবেন, নতুন কিছু আর খুঁজবেন না। পক্ষান্তরে শুধু খুঁজতে থাকলে খোঁজার পেছনেও অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। অনলাইন রিসোর্সের সেই অর্থে কোন শেষও নেই। তাই আমি নিজের প্রয়োজনে কিছু ওয়েবসাইট বুকমার্ক করে রাখি। সেই বুকমার্কিং থেকেই কিছু কিছু ওয়েবসাইট তুলে দেব এখানে। এর বাইরেও অনেক ভালো ওয়েবসাইট থাকতে পারে, অবশ্যই আছে বলেই আমার বিশ্বাস। এমন কিছু আপনি যদি জানেন তবে আমাকেও জানাতে পারেন। হয়তো আপনার পছন্দের ওয়েবসাইটটি আমারও ভালো লেগে যাবে।

আরও একটি বিষয় বলে নেয়া দরকার, যদি আপনি কিছু শেখার মনস্থির করেন তবে সেটা শেখার জন্য আপাতত দু’টি পথ আছে - ১. অনলাইনে শেখা, ২. অফলাইনে শেখা। এখানে অবশ্যই অনলাইনে শেখার ঠিকানাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। আর আমি মূলত: একজন ওয়েব ডেভেলপার, অতএব আমার রিসোর্সগুলো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ঘেষা হয়ে যেতে পারে। তবু চেষ্টা করবো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও ছুঁয়ে যেতে।

আমাদের উদ্দেশ্য যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং, কোন কিছু শেখার শুরু করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি ধরণের কাজ করবো সেটা, অতঃপর সেই অনুযায়ী শেখা শুরু করতে হবে। কি কি কাজ পাওয়া যেতে পারে? এটা জানার জন্য আসেন প্রথমেই কিছু প্রথম সারির অনলাইন মার্কেটপ্লেসের জব ক্যাটাগরি লিংকগুলো ঘুরে আসা যাক:

ফ্রিল্যান্সার.কম - https://www.freelancer.com/job
আপওয়ার্ক.কম - https://www.upwork.com/hire
ফাইভার.কম - https://www.fiverr.com/categories

টিপস: কঠিন কাজে কম্পিটিশন কম, সহজ কাজে কম্পিটিশন বেশি।

এই লেখায় মূলত টিউটোরিয়াল ও লার্নিং ওয়েবসাইটগুলোর তালিকা তুলে ধরবো, যারা অন্তত কিছু হলেও ফ্রি কোর্স অফার করে:


পছন্দের সাইট:


ইউটিউব :: সবার আগে সবার প্রথমে যে সাইটটির কথা বলতে হবেই, তা হচ্ছে ইউটিউব (YouTube.com)। সাধারণ ভিডিও শেয়ারিং বা ভিডিও ব্লগিং বা এন্টারটেইনমেন্টের উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও এডুকেশন বা লার্নিং-এর জগতে ইউটিউব এক বিপ্লবের সূচনা করেছে। যে কোন কিছু শিখতে বা জানতে এখন মনে হয় এই একটি সাইট-ই যথেষ্ট হবে। ধরুন আপনি মিউজিক কম্পোজার হতে চান বা পিয়ানো শিখতে চান। সেক্ষেত্রে https://www.youtube.com - এ গিয়ে সার্চ করুন "Learn Piano", দেখুন ক’হাজার ভিডিও আসে! অতএব যা শিখতে চান ,ইউটিউবকে একবার বলে দেখুন।

ডব্লিউ থ্রি স্কুলস :: প্রথম এই সাইটটি থেকেই আমার ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখা শুরু। কিন্তু সেই পক্ষপাতের কারণে নয়, বরং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে গেলে এই সাইটটা থেকে শুরু করা একপ্রকার ট্র্যাডিশন বলা যায়! - https://www.w3schools.com

খান একাডেমি :: খান একাডেমির কথা কে জানে না! অনলাইনে ভিডিও লেসন-এর মাধ্যমে লার্নিং-এর যে ধারণা, খান একাডেমি সেটার পথ প্রদর্শক বলা যায়। সেই অর্থে লিজেন্ড। খান একাডেমির শুরু কিন্তু ইউটিউব থেকেই। এখন খান একাডেমি একটা ব্র্যান্ড। মূলত স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটির একাডেমিক বিষয়গুলো (ম্যাথ, সায়েন্স, ইকোনমিকস, আর্টস, ইত্যাদি) শেখার বা শেখানোর জন্য পথিকৃৎ - https://www.khanacademy.org

টেন মিনিট স্কুল (বাংলা) :: যদিও খান একাডেমির সালমান খান একজন বাংলাদেশি তবু যদি ধরি ওটা আমাদের দেশের প্রোডাক্ট নয়, তো আমাদের আছে টেন মিনিট স্কুল। অনলাইন লার্নিং-এর আইডিয়াটা বাংলা ভাষায় সবচেয়ে সফল ভাবে তুলে এনেছে আয়মান সাদিক-এর টেন মিনিট স্কুল। দেখতেই ভালো লাগে। - http://10minuteschool.com

ইউডেমি :: ইউডেমির কোর্স করে অনেক মজা পাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি ইউডেমির কোর্সগুলো সবচেয়ে পছন্দ করি। এখানে ফ্রি কোর্সগুলোও যথেষ্ট ভালো মানের। - https://www.udemy.com

সলো লার্ন :: এই সাইটটিতে শেখা অনেকটা গেইম খেলার মতো। আমি বেশ মজা পাই। মজায় মজায় ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো শেখা বা ঝালিয়ে নেয়া যায় - ‍https://www.sololearn.com

ফ্রি কোড ক্যাম্প :: প্রফেশনাল লেভেলে শেখার মতো একটি সাইট। রঙচঙে সাইট না, অহেতুক কোন বাহুল্য নাই। জাস্ট লার্নিং। তাদের দাবী তাদের কোর্স কমপ্লিট করা গ্র্যাজুয়েটরা অ্যাপল, গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটে জব করছে। - https://www.freecodecamp.org

ট্রেইনিং উইথ লাইভ প্রোজেক্ট (বাংলা) :: প্রোজেক্ট করানোর মধ্য দিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখানোর জন্য এতো পরিশ্রম মনে হয় খুব বেশি মানুষ করেনি। পেছনের কারিগর দেলোয়ার ভাই ও বারী ভাই-কে ধন্যবাদ জানাই। বেসিক থেকে ইন্টারমিডিয়েট লেভেল পর্যন্ত শেখার জন্য চমৎকার। - http://www.trainingwithliveproject.com

মুক্তপাঠ (বাংলা) :: বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অফিশিয়াল ই-লার্নিং সাইট। নিজস্ব কোর্সের পাশাপাশি বিভিন্ন কোর্সের ডিরেক্টরী বিশেষ। - http://www.muktopaath.gov.bd

এনভাটো :: ওয়ার্ডপ্রেসের থিম কেনা-বেচার জন্য বিখ্যাত এনভাটো মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব কিছু লার্নিং কন্টেন্ট রয়েছে -
https://code.tutsplus.com/courses
https://code.tutsplus.com/tutorials
https://envato.com/free-courses

ডুওলিঙ্গো :: কোন কথ্য ভাষা (Spoken Language) শিখতে চাইলে দারুণ একটা ওয়েবসাইট - https://www.duolingo.com

ড্র স্পেস :: ছেলেবেলার পর শেষ কবে ছবি এঁকেছেন? আমার তো ভীষণ ইচ্ছা করে ছবি আঁকতে। ছেলেবেলায় ছবি কিন্তু খারাপ আঁকতাম না। মাঝে মাঝে আফসোসও হয়, কেন এই স্কিলটি ডেভেলপ করিনি। ছবি আঁকাআকি শিখতে চাইলে - https://www.drawspace.com

সেরা ১০ লেখালেখি শেখার সাইট :: এখানে যে লিংকটা দেব সেটা মূলত একটা ব্লগের লিংক। লেখালেখির অভ্যাস যাদের আছে বা লেখক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে ব্লগ/আর্টিকেলটা দেখতে পারেন - https://bit.ly/2ViItH9

মিউজিক :: যারা একটু মিউজিক নিয়ে কাজ করেন তারা এফএল স্টুডিও (FL Studio) -র নাম শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। যারা কোন কিছু বাজাতে পারে তারা তো পারেই, কিন্তু কোন ইন্সট্রুমেন্ট প্লে করা না জানলেও  কম্পিউটারে বসে এই সফটঅয়্যারটি দিয়ে ছোট-বড় মিউজিক বানানো থেকে শুরু করে পুরো গানই কম্পোজ করে ফেলা সম্ভব। আমার মতো কিছু অভাগাদের জন্য যারা গীটার নিয়ে সারাজীবন শুধু পিড়িং পিড়িং-ই করে গেল, তাদের জন্য এই সফটঅয়্যারটি একটি আশীর্বাদ। আমি নিজেই একদা দু’একটি আস্ত গান বানিয়ে ফেলেছিলাম এটা দিয়ে (যদিও গোপন কথা হচ্ছে, আমি যখন কাজ করেছিলাম, তখন এই ধরণের কোন টিউটোরিয়াল আছে সে খোঁজই আমার জানা ছিল না 😜)। এই সফটঅয়্যারটি শিখতে চাইলে দু’টো চমৎকার ইউটিউব চ্যানেলের লিংক দিয়ে দিলাম -
https://bit.ly/3bjXoXp
https://bit.ly/2z4IqpI

স্টে হোম - সাজিদ নূর রাতুল :: এটি জনৈক ভাই জনাব সাজিদ নূর রাতুলের শেয়ার করা একটি গুগল ড্রাইভের লিংক। চলমান করোনা লকডাউনে ঘরে বসে সবাই যেন কিছু শিখতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি এই ড্রাইভ লিংকটি শেয়ার করেছেন। নিঃসন্দেহে মহানুভব একটি চিন্তা। আমি কোন টিউটোরিয়াল এখনো ব্যক্তিগতভাবে ট্রাই করিনি, কতদিন ড্রাইভটি অ্যাকসেস করা যাবে তাও জানি না, শুধুমাত্র উদ্যোগটি ভীষন পছন্দ হওয়াতে আপাতত লিংকটি এখানে দিয়ে রাখছি। - https://tinyurl.com/ybb4bwox


আরও কিছু সাইট:

টিউটোরিয়ালস পয়েন্টhttps://www.tutorialspoint.com/index.htm
টিজ্যাগhttp://www.tizag.com
রেপটো (বাংলা) :: https://repto.com.bd
ক্লিক এন টেক (বাংলা) :: ম্যাস মিডিয়া (সাংবাদিকতা, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, টিভি রিপোর্টিং, ইত্যাদি) রিলেটেড কিছু টিউটোরিয়াল আছে এখানে - http://clickntech.com
এডুওনিক্স :: ফ্রি কোর্স খুঁজে পাওয়া মুশকিল। - https://www.eduonix.com

আপাতত এ পর্যন্ত থাকুক। বুকমার্ক করে রাখা শত শত লিংক বা ডাউনলোড করে রাখা শত শত গিগাবাইট টিউটোরিয়ালের ভেতর থেকে আপাতত এই ক’টাই চোখে পড়লো।

তবে এগুলোই শেষ নয়। ধিরে ধিরে আরও যোগ করবো ইনশাআল্লাহ, তালিকাটা বড় ও আরও সমৃদ্ধ হবে আশা করা যায়। কিন্তু এটাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারি লিংক যতই যোগ করিনা কেন, তালিকাটা তবু অপূর্ণই থেকে যাবে। দ্বিমতও থেকে যাবে। এ বলতে অমুক সাইট তো নাই, সে বলবে তমুকটা কোথায়।

জ্ঞানের পরিধি যেখানে সীমাহীন সেখানে যত দ্রুত সম্ভব নিজের অজ্ঞানতা স্বীকার করে নেয়াটাই ভালো। আর যারা সব কিছু জেনে বসে আছেন, তাদের জন্য অপরিসীম শ্রদ্ধা!

Saturday, April 11, 2020

২০১০ সালে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ওডেস্ক (oDesk, বর্তমানে Upwork)-এ প্রথম কাজ পেয়েছিলাম। কিছু দিনের ভেতরেই কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কিছু কাজ মার্কেটপ্লেসের বাইরে স্থানীয় কর্মী দিয়েও করিয়ে নিয়েছিলাম। আগে থেকে তেমন কিছুই জানতাম না, হাতে ধরে কেউ শিখিয়েও দেয়নি। কিন্তু যখন যে পরিস্থিতির সামনে পড়েছি, নিজের মতো করে সমাধান বের করে নেয়ার চেষ্টা করেছি।

এই যে কাজ পাওয়া ও কাজ করিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং-এর সামান্য যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছিলো, তা থেকে কিছু কন্টেন্ট-ও তৈরি করেছিলাম তখন। যেমন একটা প্রেজেন্টেশান বানিয়েছিলাম, যেটা কিনা নতুন কেউ কাজ করতে আসলে বা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে আসলে প্রেজেন্ট করতাম। এরপর বিভিন্ন কারণে মার্কেটপ্লেস নষ্ট হতে থাকলো। পত্র-পত্রিকায় শুধু ফ্রিল্যান্সিং আর ফ্রিল্যান্সিং, শুধু সাফল্য আর সাফল্য। সেসব দেখে-শুনে অনলাইনে ডলার কামাই করার জন্য জাতি উদগ্রীব হয়ে উঠলো। বুঝতে পেরেছিলাম, মার্কেটে বাংলাদেশের সুনামে একটা খারাপ এফেক্ট পড়তে যাচ্ছে। ইচ্ছা হয়েছিলো ফ্রিল্যান্সিংয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বাস্তব কিছু সত্য কথা লেখার বা গাইডলাইন তৈরি করার। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় সেই লেখাগুলো কখনোই আর লেখা হয়ে ওঠেনি। বরং চাকুরী ও ব্যবসার জন্য ফ্রিল্যান্সিং থেকে কিছুটা দূরেই চলে যাই।

এখন ২০১৯-২০ সালে এসে বাস্তবতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আর কোন কিছুই লেখার বাঁকি নেই। এ কয় বছরে ইন্টারনেট অনেক সহজলভ্য হয়েছে, তৈরি হয়েছে শত শত ইউটিউব চ্যানেল ও হাজার হাজার ব্লগ ও আর্টিকেল। অনেকেই অনেক সফলতার সাথে ফ্রিল্যান্সিং করছেন, চমৎকার সব কোর্স ও গাইডলাইনও তৈরি হয়েছে। মার্কেটপ্লেসগুলোতেও পরিবর্তন এসেছে অনেক।

যাইহোক, এই কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বাংলাদেশে কোন কিছু হওয়ারই বাঁকি ছিল না। ৫-১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে কোর্স করুন ও মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা ঘরে বসে আয় করুন - এই ধরণের চটকদার বিজ্ঞাপনে বাজার সয়লাব হয়েছে। কত ছেলে-মেয়ে যে এসব বিজ্ঞাপনের পেছনে ছুটেছে তার ইয়ত্তা নেই। অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে ক্লিক (click)-বাজির খপ্পরে পড়ে টাকা-পয়সা হারিয়েছে। কেউ বা বলেছে কাজ শেখাবে ও বিনিময়ে কাজ করিয়ে নিয়ে কোর্স ফি পরিশোধ করার কথা - কিন্তু সেই অশ্বডিম্বর দেখাও খুব বেশি মানুষ পায়নি।

এই সবকিছুর ফলাফল স্বরুপ একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে আপওয়ার্ক দিয়ে। বর্তমানে আপওয়ার্কে বাংলাদেশ থেকে আর নতুন একাউন্ট খোলা যায়না, এমনকি বিড করতেও টাকা লাগে, মানে টাকা দিয়ে কানেক্ট কিনতে হয়, সেই কানেক্ট ব্যভহার করে বিড করতে হয়। অনেকে ভালোভাবে কাজ না বুঝেই মার্কেটপ্লেসে নেমে গিয়েছিলো, হয়তো কোন কাজও যোগাড় করে ফেলেছে কোনভাবে, কিন্তু তারপর আর ক্লায়েন্ট-এর এক্সপেকটেশন পূরণ করতে পারে নি - এমন অনেক উদাহরণ আছে।

আমার কাছে যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যপারে জানতে আসতো তাদের সামনে প্রকৃত বাস্তবতাই তুলে ধরতাম। কি ধরণের স্কিল প্রয়োজন হবে এগুলো বলতাম। নিজের জানা অনুযায়ী প্রতিটা সম্ভাব্য পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করতাম। সব শুনে অনেকেই হতাশ হতো, অধৈর্য্য হয়ে উঠতো। ভাবতো আমি হেল্প করবো না, তাই এতো কঠিন করে বলছি। অন্য কোথাও চলে গিয়েছে, টাকা পয়সা খরচ করে বিভিন্ন কোর্স করেছে। তারপর বেদনার্ত মুখ নিয়ে একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছে, ততদিনে টাকা-পয়সা ও সময় নষ্ট করেছে।


পরবর্তীতে সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনাক্লান্ত মুখগুলো কেউ কেউ আবার দেখা করতে আসতো। ভন্ডবাবারা ছেলেমেয়েগুলোকে ব্যবহার করে পকেট ভরছে ভেবে রাগান্বিত হতাম, কিন্তু কিছু করার ছিল না। কেউ তো পরিশ্রম করতে রাজি নয়, হাজার হাজার ডলারের গল্প শুনে এ পথে এসেছে। সৎ পথে ১টি ডলার ইনকাম করতেও যে কঠিন পরিশ্রম প্রয়োজন তা বুঝতে তারা প্রস্তুত নয়। কারণ বাজারের গল্পগুলো খুব সহজ।

যাইহোক, আমি কোন বাজার থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখি নাই, তাই আমি শুরু থেকেই কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরার পক্ষপাতি। প্র্যাকটিস-প্রস্তুতি যত কঠিন হবে, মাঠে খেলা তত সহজ হবে। কিন্তু এর জন্য আমাকে অনেক দুর্নাম নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে বা হয় যদিও 😋! নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকাটাই সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক। এখন কেউ বেশি বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা।

আবার বর্তমানেও এই বাস্তবতা পরিবর্তন হয়েছে বলা যাবে না। একবারে মাঠপযার্য়ের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, ২০ জনের যদি একটা ট্রেইনিং ব্যাচ হয়, সেটার মধ্যে ২-৩ জন হয়তো প্রকৃত অর্থে কিছু শিখে বের হয়ে আসে। বাঁকিরা ওই ডলার ইনকামের স্বপ্নে বিভোর থাকে ঠিকই, কিন্তু তাতে যে পরিশ্রম ও লেগে থাকার মানসিকতার প্রয়োজন সেই ব্যপারে উদাসীন ও অধৈর্য্য। আর এমন হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের ফ্রিল্যান্সার হওয়ার (ডলার কামাই করার) স্বপ্নকে কাজে লাগিয়ে এখন তো আরও বড় বড় খেলোয়াড়রা খেলে যাচ্ছে। অতএব শুরুতেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করা জরুরী।


১.১ - ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে

অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কি, কাকে বলে এইসব এই লেখাটির বিষয়বস্তু না। গুগলে একটু সার্চ করে ও একটু পড়াশোনা করেই ফ্রিল্যান্সিং কি-কেন-কিভাবে এটা জানা ও বোঝা সম্ভব। আর যদি গুগলে সার্চ করে কিভাবে একটি বিষয় সম্পর্কে পড়ালেখা করতে হয় ও ধারণা নিতে হয় এটা যদি না জানেন, তবে আপাতত ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে এই লেখাটি আর পড়ার প্রয়োজন নেই। এখানেই থেমে যান ও কিছু একটা শেখার পেছনে সময় ব্যয় করুন।
কম্পিউটার ব্যবহার করে কিছু করতে চাইলে যে একদমই বেসিক, মানে প্রি-বেসিক নলেজগুলো থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে বলা যেতে পারে:
  • ইংরেজিতে বেসিক কমিউনিকেশন, স্কুল লাইফ থেকেই যা আমরা শিখছি
  • টেকনোলজির জগতে কি কি পরিবর্তন হচ্ছে, সেই পরিবর্তনগুলো মানুষের জীবন-জীবিকায় কিভাবে প্রভাব রাখছে এসব ধারণা রাখা
  • কম্পিউটার যন্ত্রটা সম্পর্কে জানা, ইনপুট আউটপুট ডিভাইস গুলো চেনা
  • এরপর কোন একটা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারা, ট্রাবলশুট করতে পারা
  • ইন্টারনেট ব্রাউজিং-ইমেইলিং-চ্যাটিং-সার্চিং-সার্ফিং ভালোভাবে জানা
  • মাইক্রোসফট অফিসের মতো কিছু এসেনশিয়াল সফটওয়্যার/প্রোগ্রাম-এর ব্যবহার জানা
  • নিজের সিভি/অনলাইন প্রোফাইল ও কভার লেটার কিভাবে তৈরি করতে হয় ও সাবমিট করতে হয় এগুলো জানা
...এগুলো কে মিনিমাম কিছু বেসিক নলেজ হিসেবে বলা যেতে পারে।


১.২ - বেসিক জানি, কিন্তু মাইন্ডসেট করতে পারছি না

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে নিজের সাথে একটা স্পষ্ট বোঝাপড়া থাকা উচিৎ যে আপনি কেন এটা শুরু করতে চান। অবশ্যই অর্থ উপার্জনের জন্য, তাই না? কিন্তু সেটার জন্য তো আরও পথ আছে। ফ্রিল্যান্সিং-ই কেন?

ফ্রিল্যান্সিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া কিন্তু খুব কঠিন একটি সিদ্ধান্ত। আবার আপনি ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিং না করে পার্টটাইমার হিসেবেও শুরু করতে পারেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই ফ্রিল্যান্সিং পেশায় প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে, একজন ফুলটাইমারের পক্ষেই সফলভাবে টিকে থাকা বেশ মুশকিল। এতো প্রতিযোগির মধ্যে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে একটি আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়। যেহেতু পুরো পৃথিবীটাই আপনার সম্ভাব্য মার্কেট, অতএব আপনার সক্ষমতাও হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।

ফ্রিল্যান্সিং কে আপনি চাকুরী ও ব্যবসার সমন্বয় হিসেবেও চিন্তা করতে পারেন। এখানে অফিসের মতো মাথার উপর বস নেই, কিন্তু ক্লায়েন্ট আছে। এই ক্লায়েন্ট-ই আপনার হায়ারিং ম্যানেজার, এই ক্লায়েন্ট-ই আপনার অলিখিত বস। আবার এই ক্লায়েন্ট-ই আপনার কাস্টমার বা সার্ভিস বায়ার (Buyer)।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে আবার আপনি নিজেই কিন্তু একটা আস্ত অফিস বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানে কাজ খোঁজা, কাজ বুঝে নেয়া ও কাজ সম্পন্ন করে ডেলিভারী দেয়া - এই পুরো ব্যাপারটি আপনার নিজেকেই করতে হবে। অতএব বুঝতেই পারছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং করা মানে চাকুরী করার চেয়েও কঠিন। যথেষ্ট পরিমান আগ্রহ, প্রস্তুতি, একাগ্রতা ও পরিশ্রমের মানসিকতা না থাকলে কিছুদিন পরেই হতাশ হয়ে পড়া খুবই সাধারণ ঘটনা। শুধু অন্যের সাফল্যের গল্প বা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে এই পথে সাফল্য পাওয়া প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বচ্ছ ধারণা ও শক্ত সিদ্ধান্ত কিভাবে নিবেন? শুরু না করে তো আর বোঝা যাচ্ছে না যে আপনি পারবেন কি পারবেন না।


১.৩ - ডি-মোটিভেশন টেকনিক

এবার আসল ট্রিক। অ্যাসিড টেস্ট। এখানেই সাধারণত শতকরা ৮০-৯০ ভাগ উৎসাহী হবু ফ্রিল্যান্সার ডি-মোটিভেটেড হয়ে যায়, হাল ছেড়ে দেয়, বিরক্তি দেখিয়ে উল্টো পথে হাঁটা দেয়।

বিষয়টি কিছুই না, আগ্রহী ব্যক্তিটিকে আমি শুধু ছোট্ট একটা কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট দেই। সেটা হলো ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে এটা নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে দেই। অর্থাৎ অ্যাসাইনমেন্টটা হচ্ছে - নিজে নিজে পড়াশোনা করে জেনে আসা ফ্রিল্যান্সিং - কি? কেন? কিভাবে? ভেবে দেখুন এরচেয়ে সহজ কাজ আর কি হতে পারে? কিন্তু যে জানে না বা জানার জন্য আগ্রহ নাই, কাজ করার মানসিকতা নাই, তারজন্য এই কাজটিই রকেট সাইন্সের মতোই কঠিন।

অ্যাসাইনমেন্টে যা করতে হবে
শুরুতেই এক থেকে দুটো দিন ব্যয় করুন শুধু পড়াশোনা ও জানার জন্য। এই পড়াশোনাটা হতে পারে অনলাইনেই। Google-এ ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং লিখে সার্চ করলেই প্রচুর বাংলা বা ইংরেজি রিসোর্স পাবেন। রিসোর্সগুলো (হতে পারে আর্টিকেল, ভিডিও বা অন্যান্য) মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, শুনুন, বুঝুন। এবং ছোট ছোট নোট (note) নিন। মনে রাখতে হবে, এই দু’টোদিন শুধুই পড়বেন বা জানবেন। সার্চ দিলে প্রচুর লোভনীয় বিজ্ঞাপন আসবে, ভিডিও আসবে। নামের আগে ফ্রিল্যান্সার বসিয়ে বসে আছে ফ্রিল্যান্সার কাছিম, ফ্রিল্যান্সার মাকড়সা ইত্যাদিি ইত্যাদি লোভনীয় জাল বিছিয়ে, যেমন মাত্র ১০ মিনিট কাজ করেই হাজার হাজার টাকা আয় করুন, অথবা আমাদের কাছে আসুন ১০ দিনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বস বানিয়ে দেবো, ইত্যাদি ইত্যাদি। দু’একটা আর্টিকেল পড়েই কিংবা কোন ভিডিও দেখেই হুট করে কোন কিছুর পেছনে ছুটবেন না, বা কোন কিছু শেখা শুরু করবেন না, অন্তত এই দুই দিন।

যে বিষয়গুলিতে নোট নিবেন তার সম্ভাব্য একটি ধারণা দেওয়া হলো:
  • ফ্রিল্যান্সিং / আউটসোর্সিং কি ও কিভাবে হয়?
  • ফ্রিল্যান্সিং / আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার সম্ভাব্য সাইট লিস্ট
  • কি কাজ পাওয়া যায় ও আপনি কোন ধরণের কাজ করতে চান
  • আপনার আগ্রহ অনুযায়ী কোন কোন স্কিল ডেভেলপ করা দরকার
  • কেমন কম্পিউটার ও কি কি সফটঅয়্যার প্রয়োজন হতে পারে, কি ধরণের ইন্টারনেট স্পিড ও সংযোগ প্রয়োজন হবে?
  • এবং আরও কিছু যা আপনার কাছে ইম্পর্টেন্ট মনে হবে।
আবারো বলছি এই দুটো দিন শুধু নিজের মতো করে পড়ুন বা জানুন ও নোট নিন। চেষ্টা করবেন কারও সাহায্য না নিতে। এটা হচ্ছে আপনার নিজের নিজেকে জানা, নিজেকে চেনা, নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করার সময়। এই যে নিজেকে আবিস্কার করার অনুভূতিটা কিন্তু ম্যাজিকের মতো একটা ব্যপার। এই সময় দেখবেন সময় যত গড়াতে থাকবে আপনার নিজের ভেতরেই একটা কনফিডেন্স তৈরি হতে থাকবে যে না আপনি পারবেন অথবা ফিল করবেন যে না বিষয়গুরো মনে হয় একটু বেশিই জটিল আপনার জন্য।

আসলে এই যে আত্ম-উপলব্ধি, এই যে দুইদিন পড়াশোনার কাজটি (একা একা) করা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগৎ অনেকটা একলা চলার মতোই জগৎ। এখানে আপনাকে একা চলতে হবে, এবং ধরেই রাখতে পারেন, আপনার সমস্যাগুলি আপনাকেই সমাধান করতে হবে। অতএব শুরুতেই এই একা একা পড়াশোনা করা, একাই সিদ্ধান্তে আসতে পারার ব্যপারটা সেই একলা চলতে পারারই ছোট্ট কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা বা অনুশীলন। এবং যদি আপনি এই কাজটি ধৈর্য্যের সাথে শেষ করতে পারেন তাহলে টানেলের শেষে একটা সুক্ষ্ণ আলো দেখা যেতে পারে যে হ্যাঁ আপনার দ্বারা হলেও হতে পারে।


১.৪ - ভাই! আমি পেরেছি! কিন্তু...

ধরা যাক, এই দুটো দিন পড়াশোনার কষ্ট করার পরও ফ্রিল্যান্সিং-এর ইচ্ছা এখানো আপনার মনে বর্তমান আছে। আপনাকে ডিমোটিভেট করা যায়নি। এটা খুবই ভালো লক্ষণ! কিন্তু মনে কিছু বা অনেক প্রশ্ন এসেছে। এটাই স্বাভাবিক। জানতে গেলে মনে প্রশ্ন আসবেই। সব কিছু একবারে কখনোই পরিস্কার হয় না।


এইবারে আপনি চেষ্টা করুন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো সাথে কথা বলার। কোথায় কোথায় বোঝেন নাই বা কি কি প্রশ্ন আছে আপনার নোটটি দেখে দেখে সেই পয়েন্টগুলো পরিস্কার হয়ে নিন। এতক্ষণে আমি আপনাকে পারসোনালি মোটিভশনাল স্পিচ দেয়ার জন্য প্রস্তুত, যেহেতু আপনি নিজেই কিছুটা পরিশ্রম করেছেন।

কিন্তু আপনি যদি নিজে একটুও চেষ্টা না করে প্রথমেই - ভাইয়া, কিভাবে কি করবো বুঝতেসিনা - টাইপ প্রশ্ন করেন তাহলে সম্ভবত কেউ-ই আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগ্রহ দেখাবে না, বরং উল্টাপাল্টা একটা কিছু বুঝিয়ে ভেগে যাবে। আর আপনি ভাববেন - বাপরে! কি অহংকার! কি ভাব!


১.৫ - মোটিভেশন পাওয়ার পর

এবার আপনার স্কিল নিয়ে মাঠে নামার পালা। কিন্তু তার আগে একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। প্রশ্নটি হলো - ভাইয়া ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চাই, কিন্তু কোথায় শিখবো? ভালো কোথায় শেখায়?

এই প্রশ্নটার একটু বিষদ ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন।

প্রথম কথা হলো এই প্রশ্নটাই আপাদমস্তক একটা ভুল প্রশ্ন। যার দোষ আসলে আপনার না। এতাদিন ধরে যারা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং শিখাইসে বা বুঝিয়েছে যে ফ্রিল্যান্সিং ৫-১০ হাজার টাকা খরচ করলেই শেখা যায়, দোষটা তাদের। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে, ফ্রিল্যান্সিং আলাদাভাবে শেখার কিছু নেই। আমার কাছে “ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো” আর “ফেসবুকিং কিভাবে করে” দুটো প্রশ্নই প্রায় সমার্থক। যার অনলাইন দুনিয়ার সাধারণ জ্ঞান আছে তাদেরকে কোনটাই আলাদা ভাবে শেখানোর কিছু নাই।

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে কাজ করা বা জীবিকা নির্বাহের আরও একটি পেশাদারী পদ্ধতি, যেমন চাকুরী অথবা ব্যবসা। শেখার যদি কিছু থাকে তবে সেটা হচ্ছে আপনি যে কাজটি করতে চান সেটি শেখা। অর্থাৎ স্কিল ডেভেলপ করা। আপনার স্কিল হতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ওয়েব ডিজাইন বা আর্টিকেল রাইটিং, ইত্যাদি। অতঃপর একজন গ্রাফিক ডিজাইনার বা ওয়েব ডেভেলপার বা রাইটার হিসেবে আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করবেন।

আপনি যদি ডাক্তার হয়ে উপার্জন করতে চান তো অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারি বিদ্যায় প্রথমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এরপরে আপনি ডাক্তার হয়ে চাকুরি করবেন, নাকি নিজেই একটি ক্লিনিক বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন, নাকি একটা চেম্বার করে একা একাই প্র্যাকটিস শুরু করবেন সেটা পরের ব্যপার। ঠিক একইভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে সবার প্রথমে আপনাকে নির্দিষ্ট কোন বিষয় বা কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তো আপনাকে প্রথমে গ্রাফিক্স ডিজাইন জানতে হবে। আপনি যদি শুধু লোগো ডিজাইনের কাজগুলো করতে চান, তাহলে আপনাকে লোগো ডিজাইন করা জানতে হবে। আপনি যখন লোগো ডিজাইনে দক্ষতা অর্জন করে ফেলবেন, তখন আপনি অনলাইনেই হোক আর অফলাইনেই হোক লোগো ডিজাইনের কাজ করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস বা বিজনেস শুরু করতে পারবেন।

অর্থাৎ আপনার দক্ষতাকে আয়-রোজগারের কাজে লাগানোর একটি পথ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং করা। ফ্রিল্যান্সিং আলাদা করে শেখার তেমন কিছু নেই। অল্প কিছু নিয়ম-নীতি জানলেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায়।

কথা-বার্তা বক্তৃতা-বিবৃতি যা ছিল সব বলা শেষ। এবার আসেন প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়ানোর ব্যপারটায়।

এক্ষেত্রে বিদগ্ধ ব্যক্তিরা যা বলে থাকেন - তোমার যা ভালো লাগে সেটাকেই আয় রোজগারের উপায় বানাও হে বৎস! - এটাই আল্টিমেট উপদেশ। অতএব নিজেকেই প্রশ্ন করুন আপনি কোন বিষয়টা ভালো জানেন বা কোন কাজে আপনি আগ্রহ পান। অথবা ইতিমধ্যেই কোন কোন কাজে আপনি স্কিলড। যে কাজটি আপনার ভালো লাগে সেই জিনিসটি শেখা যেমন তুলনামূলক সহজ হয়ে যায়, আবার কাজ করেও আনন্দ পাওয়া যায়।

আমাদের উদ্দেশ্য যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং, কোন কিছু শেখার শুরু করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি শিখবো বা কি ধরণের কাজ করবো? কি কি কাজ পাওয়া যেতে পারে? এটা জানার জন্য আসেন প্রথমেই কিছু প্রথম সারির অনলাইন মার্কেটপ্লেসের জব ক্যাটাগরি লিংকগুলো ঘুরে আসা যাক:

ফ্রিল্যান্সার.কম - https://www.freelancer.com/job
আপওয়ার্ক.কম - https://www.upwork.com/hire
ফিভার.কম - https://www.fiverr.com/categories


টিপস: কঠিন কাজে কম্পিটিশন কম, সহজ কাজে কম্পিটিশন বেশি।

আশা করছি ফ্রিল্যান্সিং সিরিজের পরবর্তী লেখাটিতে অনলাইনের বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সাইটগুলোর রিসোর্স ও লিংক দিব। তাতে কোথায় গেলে কি শিখতে পারবেন তা জানা যাবে। হাজার হাজার সাইট আছে, আমি শুধু আমার বাছাই করা কিছু দেব। তবে সেটার আগে আপাতত ফাইনালি ভাবুন আপনি কোন কাজে সবচেয়ে ভালো বা স্কিলড? সেই কাজটি কি অনলাইনের মাধ্যমে করা সম্ভব? কারা আপনার সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট? আপনি কি তাদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম?


১.৬ - কিছু বিষয় মনে রাখবেন:
  • নিজের কাজ নিজেকে করতে হবে। মামা-চাচা কোনো কাজে আসবে না। অফিস পলিটিক্সেরও কোন স্থান নেই।
  • ফ্রিল্যান্সিং অনেকটা একলা চলোর জগৎ। কখনো একা চলা, কখনো টীম মেম্বার নিয়ে “একসাথে একলা” চলা।
  • প্রতিনিয়ত শেখা এবং দক্ষ হয়ে ওঠার দিকে সর্বাধিক মনোযোগ দিতে হবে। কাজ মানসম্মত হতে হবে। নাহলে ভালো ভালো মুভি দেখে জীবন পার করে দিন সেটাও অনেক ভালো, কিন্তু ফ্রিল্যান্সার হওয়ার নিজেকে ও পরিবারকে প্যারা দিয়েন না।
  • নিজের সকল অনলাইন বা মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইল প্রতিনিয়ত আপ-টু-ডেট রাখতে হবে, মার্কেটপ্লেসের নিয়ম কানুন বুঝে চলতে হবে।
  • পোর্টফোলিও ও কাভার লেটার আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। পোর্টফোলিও অনেকটা দোকানে পণ্য সাজিয়ে রাখার মত। ভালো পণ্য না থাকলে কাস্টমারও আসবে না। আর বিজনেস কমিউনিকেশন ও অনলাইন কমিউনিকেশন (চ্যাট/ই.মেইল/ইত্যাদি) এটিকেট নিয়ে পড়াশোনা করলে ব্যপক ফলাফল পাবেন।

বোনাস:

যদিও এটা আপনার নিজে নিজে খুঁজে নেয়ার কথা, তবু কষ্ট করে এতোদূর এসেছেন, তাই মনটা নরম হয়ে গেছে। তাছাড়া ক্লায়েন্টরা যখন কাজ শেষে বোনাস দেয় তখন খুব আনন্দ হয়। তাই আমিও চেষ্টা করি একটা বোনাস সেকশান রাখতে।

তাই অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কি, কাকে বলে এই সংক্রান্ত কিছু রিসোর্স/লিংক দিয়ে দিলাম:

💥 ফেসবুক গ্রুপ “ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশ” -এ এম.এইচ.মামুন ভাইয়ের সিরিজ: https://bit.ly/34wnNP8

💥 ফেসবুক গ্রুপ “ফাইভার হেল্প বাংলাদেশ” -এ গোলাম কামরুজ্জামান ভাইয়ের এই লেখাটি পড়তে পারেন। এটা ফাইভার মার্কেটপ্লেসটিকে বুঝতে সাহায্য করবে, তবে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা যাবে। - https://bit.ly/2ViV0JA

ফেসবুক এই গ্রুপগুলি কিন্তু অনেক উপকারী, বিশেষ করে নতুনদের জন্য। ফেসবুকিংয়ের মজাও পাবেন, আবার এক্সপার্টদের কাছে থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যাবেন।

আজকের মতো বিদায়। আপনার সুস্থতা কামনা করি। ব্লগটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।