Hungry to Know

Saturday, January 26, 2019

ফ্রি (Free) এর দুনিয়ায় সবাইকে স্বাগতম! “ওয়েবসাইট চাই, কিভাবে কি করবো?” পর্বে যেমনটা বলেছিলাম, সময়টাই এখন ফ্রি-এর সময়। সবকিছুর সাথে একটা কিছু ফ্রি বা ছাড় জাতীয় কিছু না থাকলে আমাদের ভালো লাগে না। প্রযুক্তির বাজারেও এই ফ্রি কালচারের বেশ আবেদন রয়েছে বৈ কি! এই তো বছর কয়েক আগেই মাইক্রোসফট তাদের নতুন অপরেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০-এ ফ্রি আপগ্রেড করার সুযোগ দিল। আমিও সেই সুযোগে আমার উইন্ডোজ সেভেনটাকে জেনুইন উইন্ডোজ ১০ বানিয়ে নিলাম। আজ পর্যন্ত সেটাই চলছে।

তো আস্ত একটা অপারেটিং সিস্টেম ফ্রি পাওয়া যায় যখন, তখন ওয়েবসাইটও ফ্রি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু……..। ....এই ‘ফ্রি’ এবং সেই ‘কিন্তু...’ নিয়েই আজকের যত কথা।

আপাত দৃষ্টিতে ফ্রি ওয়েবসাইট পাওয়ার তিনটি পদ্ধতি আছে:
  • ১. সবকিছু নিজে নিজে করা, অর্থাৎ ডিজাইন/ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও হোস্টিং সংক্রান্ত ফ্রি সার্ভিসগুলো ব্যবহার করা।
  • ২. এমন কোন ডেভেলপারকে খুঁজে নেয়া যে তার ক্যারিয়ার শুরু করতে চাচ্ছে এবং পোর্টফোলিও (Portfolio) ভারী করার জন্য কয়েকটি কাজ ফ্রি করে দিতে আগ্রহী।
  • ৩. তিন নম্বর পদ্ধতিটা হচ্ছে - কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে ভদ্রতার খাতিরে টাকা-পয়সা কিছু-ই না দেয়া। হাহাহাহা!
২ ও ৩ নং পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলার নাই। এক নম্বর পদ্ধতিটি নিয়েই যত আলোচনা। অর্থাৎ অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে না খেয়ে আপনার নিজেকেই পরিশ্রম করতে হবে। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হলো-
  • ১. ফ্রি ডোমেইন নেম রেজিষ্ট্রেশন করা (Domain Registration)
  • ২. ফ্রি ওয়েবসাইট হোস্ট করা (Web Hosting)
  • ৩. ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা (Web Design & Development)
    • ৩.১: নিজে ওয়েবসাইট বানিয়ে ফ্রি হোস্ট ব্যবহার করা
    • ৩.২: অনলাইন ওয়েবসাইট বিল্ডার সার্ভিস ব্যবহার করা (এক্ষেত্রে ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না।)
এগুলোই হচ্ছে ফ্রি ওয়েবসাইট পাওয়ার সম্ভাব্য কিছু পথ। আসলে অনেক রকম সার্ভিস আছে, অনেক রকম উপায় আছে। সম্ভাব্য সবকিছুর সহজ সরলিকরণ করা সম্ভব না, তবে কিছুটা আলোচনা করা যাক-

১. ফ্রি ডোমেইন নেম রেজিষ্ট্রেশন করা (Domain Registration)

ফ্রি ডোমেইন পাওয়ার খুব বেশি সুযোগ আপনার সামনে খোলা নেই। উপায় হচ্ছে .TK / .ML / .GA / .CF / .GQ -এর মতো ফ্রি ডোমেইনগুলো ব্যবহার করা, যা কিনা ফ্রিনোম (Freenom.com) নামে একটি কোম্পানি সেবাটি দিয়ে থাকে। এর মধ্যে .tk ডোমেইনটি বেশ জনপ্রিয়। ফ্রিনোম এর ব্যপারে জানতে https://www.freenom.com/en/freeandpaiddomains.html আর .tk ডোমেইন এর ব্যপারে জানতে http://www.dot.tk/en/index.html লিংক দুটি ভিজিট করতে পারেন। .tk ডোমেইন নিলে আপনার ওয়েবসাইট যেখানে হোস্ট করা থাকবে সেখানে ডোমেইন ফরোয়ার্ড করে নিতে হবে, কারণ এটি শুধুই একটি ডোমেইন সার্ভিস, হোস্টিং নয়।

ফ্রি ডোমেইন পাওয়ার আরেকটি উপায় হতে পারে কমার্শিয়াল হোস্টিং কম্পানিগুলো যদি ফ্রি ডোমেইন অফার করে তাহলে। তবে সেগুলো হয় অল্প সময়ের জন্য, হয়তো বা ১ বছর, অথবা প্যাকেজ অফারের অন্তর্ভূক্ত যেমন হোস্টিং কিনলে ডোমেইন ফ্রি। অতএব এটা পুরোপুরি ফ্রি সার্ভিস বলা যায় না।

২. ফ্রি ওয়েবসাইট হোস্ট করা (Web Hosting)

তো যা বলছিলাম যে .tk ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করলে আপনার আলাদাভাবে একটি হোস্টিং সার্ভিস-এর ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। এমনতর হোস্টিং সার্ভিস আছে যারা আপনাকে কিছু সুবিধাসহ ফ্রি ওয়েবস্পেস দেবে, সিপ্যানেল (cPanel)-ও দিতে পারে (cPanel হচ্ছে ওয়েবসাইট হোস্টিং-এর একটি জনপ্রিয় কন্ট্রোল প্যানেল বা ইন্টারফেস) যা দিয়ে আপনি হোস্টিং-এর সত্যিকারের মজা নিতে পারবেন। এমন কিছু সার্ভিস যেমন:
  • freehosting.com (সিপ্যানেল সহ)
  • 000webhost.com
  • megabyet.com
  • byet.host/free-hosting
  • hostt.com
  • x10hosting.com
  • 5gbfree.com
এরমধ্যে আমি কৌতুহলবশত: 000webhost.com ব্যবহার করে দেখেছিলাম, বাঁকিদের কথা এই মুহূর্তে বলতে পারছিনা। 000webhost.com -এর ফ্রি অফারের মধ্যে আছে সীমিত ১ গিগাবাইট ডিস্ক স্পেস, ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডওয়াইডথ, কোন ইমেইল সার্ভিস ও ব্যাকআপের সুবিধা নেই, সেই সাথে লাইভ সাপোর্টও নেই। বুঝতেই পারছেন অবস্থা!

৩. ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা (Web Design & Development)

এই অংশটিকে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছি:
  • ৩.১: নিজে ওয়েবসাইট বানিয়ে ফ্রি হোস্ট ব্যবহার করা
  • ৩.২: অনলাইন ওয়েবসাইট বিল্ডার সার্ভিস ব্যবহার করা (এক্ষেত্রে ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়ে না।)

৩.১. নিজে ওয়েবসাইট বানিয়ে ফ্রি হোস্ট ব্যবহার করা

যদি আপনি আপনার কম্পিউটারে নিজেই সাইট ডেভেলপ করে ফেলেন তো সেটা হচ্ছে সবচাইতে ভালো উপায়। এক্ষত্রে HTML, CSS, বড়জোর JavaScript ব্যববহার করে সাইট বানাবেন, PHP বা এমন কোন সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ (Server-Side Scripting Language) ও ডাটাবেজ (Database) ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ যেহেতু আমরা ফ্রি ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করতে যাচ্ছি অতএব সেটা PHP সাপোর্ট নাও করতে পারে, আর ডাটাবেজ ব্যবহারের সুবিধাও না থাকতে পারে। আর যদি আপনার হোস্টিং কোম্পানির ফ্রি অফারের ভেতরে এগুলোর সবই থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই।

৩.২: অনলাইন ওয়েবসাইট বিল্ডার সার্ভিস ব্যবহার করা

অনলাইনে অনেক সার্ভিস আছে যারা আপনাকে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার সুযোগ করে দেবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশান ও হোস্টিং নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না, এবং ওয়েবসাইট বিল্ডার (Website Builder / Page Builder) ব্যবহার করে ও যে কোন একটি  প্রিডিফাইন্ড (Predefined) টেমপ্লেট (Template) বা থিম (Theme) পছন্দ করে ‘টানা-ছাড়া’ (Drag & Drop) করে নিজেই ওয়েবসাইট সাজিয়ে নিতে পারবেন। নিজের কন্টেন্টগুলো যতটা সম্ভব ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করে-ই সাইট-এ বসিয়ে নিতে হবে।

তবে এই জিনিসের সুবিধার সাথে কিছু অসুবিধা তো আছে-ই, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আপনার পছন্দের নাম-এর সাথে কোম্পানিটি নিজেদের ডোমেইন যোগ করে দেবে ও আপনার ওয়েবসাইটে তারা বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে। সেই সাথে ফ্রি বলতে তারা ঠিক যতটুকু ফিচার ও সুযোগ-সুবিধা (Facility) ফ্রি দেবে সেগুলোর নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে থেকেই আপনাকে তাদের সার্ভিসটি ব্যবহার করতে হবে। আপনি চাইলেই আপনার নিজের মতো কোন সুবিধা যোগ করতে পারবেন না, সেটা করতে গেলেই তখন তারা পয়সা দাবি করবে। অবশ্যই ফ্রি সার্ভিসের কিছু বাধ্যবাধকতা তো থাকবেই এবং এই বাধ্যবাধকতা বা সুযোগ-সুবিধা যাই বলি না কেন কোম্পানি ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

সাব-ডোমেইন ও সাব-ডিরেক্টরী

আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ওয়েব সাইট  বিল্ডার বা ফ্রি হোস্টিং সার্ভিসগুলো সার্চ এঞ্জিন ফ্রেন্ডলি নয়। সাধারণত সার্চ এঞ্জিনগুলো এই ধরণের সাইট বা পেজগুলো কে ইনডেক্সিং করা থেকে বিরত থাকে। অর্থাৎ সার্চ এঞ্জিনের মাধ্যমে সাধারণ ভিজিটর আপনার ওয়েব সাইটটি খুঁজে পাবে না।
 
তবে ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করলে সবকিছু এক স্থানেই হয়ে যাচ্ছে। এই পন্থায় আপনাকে ডোমেইন, হোস্টিং ও ওয়েবসাইট ডিজাইন কোন কিছু নিয়েই তেমন দুঃচিন্তা করতে হচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই তিনটি সার্ভিসগুলোর সবকিছুই উক্ত কোম্পানিগুলো প্রদান করে থাকে। এই ‘মহানুভব’ কোম্পানিগুলো আপনাকে সাব-ডোমেইন বা সাব-ডিরেক্টরি হিসেবে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ (Blog) অ্যাকাউন্ট করতে দেবে এবং নিজস্ব বা বিল্ট-ইন ওয়েবপেজ বিল্ডার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের মেন্যু (Menu) ও মেন্যু সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওয়েবপেজ তৈরি করতে দেবে, এমনকি ছবি, ডিভিও-ও আপলোড করতে দিতে পারে। অর্থাৎ শুধু আপনাকে আপনার কন্টেন্ট কম্পিউটার থেকে আপলোড করে সঠিক স্থানে বসিয়ে নিতে হবে বা সাজিয়ে নিতে হবে।

কিছু সাইট বা পেজ বিল্ডার সার্ভিস:
ওয়েব হোস্টিং-এর মূল প্রয়োজনটাই হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো কোন একটা ওয়েব সার্ভারে আপলোড করা। যে হোস্টিং সার্ভিসগুলোর নিজস্ব সাইট বিল্ডার থাকে, সেখানে ফাইলপত্র যা তৈরি হওয়ার অনলাইনেই ওদের নিজস্ব সার্ভারের ভেতরে সবকিছু হয়ে যায়। এমন কিছু সাইট এর নাম আমি নিচে দিয়ে দিলাম। কে কোন ফিচার বা সুযোগ-সুবিধা অফার (Offer) করছে সেটা ওদের নিজ নিজ অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে দেখে নিতে হবে।
  • Wix
  • Weebly
  • SITE123
  • Strikingly
  • WordPress.com
  • blogger.com
  • Jimdo
  • IM Creator
  • Webnode
  • Webs.com
  • Mozello
এর মধ্যে WordPress.com, Blogger.com, Webs.com আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা নাড়াচাড়া করে দেখেছি। Wix আর Weebly -ও মনে হয় দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। এছাড়া বাকিগুলোর ব্যপারে তেমন কোন ধারনা নেই। আপনি চাইলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন, তাছাড়া এমন আরও অনেক সার্ভিস Google-এ সার্চ করলেই পাওয়ার কথা।

উপসংহার

উপসংহারে এসে আরও কিছু ভালো-মন্দ কথা বলে নিই।

ফ্রি সার্ভিসগুলো ব্যবহারের সময় সবচেয়ে বড় যে কথাটা মনে রাখবেন তা হলো এগুলো ‘ফ্রি’! ফ্রি সার্ভিস যখন একটি কোম্পানি দেয় তখন অনেক রকম নীতিমালা (Terms & Conditions) বানানো থাকে, যার মধ্যে কিছু থাকে দায়মুক্তির কথাবার্তা। এই নীতিমালাগুলো যদি আপনি ভালো ভাবে না বোঝেন বা মেনে না চলেন তাহলে কোন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়তো দেখবেন আপনার ওয়েবসাইটটি কোন কারণ দর্শানো ব্যাতিরেকেই উধাও (Down) হয়ে গেছে! খেটেখুঁটে একটা ফ্রি ডোমেইন ও সাইট হয়তো কিছুটা জনপ্রিয় করেছিলেন, লোকে হয়তো কিছুটা চিনেছিল, সেটা এক নিমিষেই গায়েব। এতোদিনের সকল পরিশ্রম মূহুর্তেই জলে চলে গেলো! অতএব বুঝতেই পারছেন পদে পদে অনেক ‘কিন্তু’-র সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই ’ফ্রি’-এর জগৎ। অতএব ফ্রি কিছু পেলেই সেটা গলাধকরণ শুরু করবেন না, অপেক্ষাকৃত ভালো সার্ভিসগুলো বেছে নেয়ার চেষ্টা করবেন।

তাছাড়া ফ্রি ডোমেইন বা পেজ বিল্ডারের সাব-ডোমেইন হিসেবে ওয়েবসাইট তৈরি করে সেই ওয়েব অ্যাড্রেসটি যখন আপনি আপনার অফিসিয়াল প্যাড, ভিসিটিং/বিজনেস কার্ড, সাইনবোর্ড ইত্যাদি জায়গায় ব্যবহার করবেন, অ্যাড্রেসটি দেখতে মোটেই প্রফেশনাল হবে না।

...এবং সারমর্ম

ফ্রি সার্ভিস দিয়ে আপনার কিছু দিনের প্রাথমিক চাহিদা হয়তো পূরণ হবে। আপনার মনকে লাগাম দিয়ে যদি সারাজীবন ওইসব ফ্রি সার্ভিসের স্বল্প সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই নিজের চাহিদাকে ধরে রাখতে পারেন তো সেক্ষেত্রে ফ্রি সার্ভিসগুলো খুব খারাপ সমাধান তা আমি বলবো না। ওয়েবসাইট ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট অনুশীলন করার জন্য, খরচ বাঁচানোর জন্য, ছোটখাটো প্রয়োজন পূরণ করার জন্য, স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ফ্রি সার্ভিসগুলো ব্যবহার শুরু করে দেখতে পারেন। কিন্তু যদি প্রফেশনাল চাহিদা থাকে, নিত্যনতুন ফিচার বা আইডিয়া যোগ করার প্রয়োজন থাকে, বেশি ডিস্কস্পেস-এর প্রয়োজন হয়, ই-মেইল অ্যাড্রেস, ডাটাবেজ বা কোম্পানির ব্র্যান্ডিং (Company Branding)-এর প্রশ্ন চলে আসে, ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন সময়ের সাথে সাথে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার এমন অনেক চাহিদা তৈরি হচ্ছে যা ফ্রি সার্ভিসগুলো দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন আপনাকে পেইড সল্যুশন (Paid Solution)-এর দিকেই যেতে হবে।

বোনাস

কি মনে হচ্ছে? হতাশ?....তাহলে নিচের লিংকগুলো একটু দেখে নিতে পারেন-
  • ব্লগার.কম-এ আমার ফ্রি ব্লগ (যেটা এখন দেখছেন): https://shahriarzahan.blogspot.com
  • ব্লগার.কম-এ বানানো আরও একটি ওয়েবসাইট: http://aporajitaonline.blogspot.com
  • এছাড়া বিভিন্ন ফ্রি সার্ভিস ব্যবহার করে তৈরি কিছু ওয়েবসাইট-এর উদাহরণ:
    • https://teoalida.webs.com
    • https://coffee-shop33.webnode.com
    • https://yogabusiness.weebly.com
    • https://tooltester.webstarts.com/index.html
    • https://photographytooltester.jimdofree.com
    • https://biztest.site123.me
    • http://blogger.mozello.com
    • http://furniturestoredemo.strikingly.com
    • http://roberts-fabulous-project-adfc12.webflow.io
    • https://zeitfrbrot.bookmark.com
এবার বেশ আশার আলো দেখা যাচ্ছে, কি বলেন? 😃


ওয়েব সাইট কি ও কেন প্রয়োজন এটা আমরা ইতিমধ্যেই জেনে নিয়েছি। অনেকেই নিজের বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকার গুরুত্ব বুঝে গেছেন। এই মুহূর্তে অনেকেই আছেন যারা একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটের কথা ভাবছেন ও জানতে চান কিভাবে কাজটি শুরু করা যেতে পারে। যদিও বিষয়গুলো প্রযুক্তি নির্ভর, তবুও এই লেখাটির মাধ্যমে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা যাক। যারা জটিল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে বেশি সময় না দিয়ে মূল বিষয়টা বুঝতে চাচ্ছেন তারা এই লেখাটির মাধ্যমে উপকৃত হবেন আশা করি।

কাজ করতে গিয়ে সামান্য যে অভিজ্ঞতাটুকু হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে লেখাটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেয়া যাক -

প্রথম ধাপ: কি ধরণের ওয়েবসাইট চাই, কি কি সুবিধা চাই
দ্বিতীয় ধাপ: নিজে নাকি ওয়েব ডেভেলপার?
তৃতীয় ধাপ: ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়ে একটু জানাশোনা
চতুর্থ ধাপ: আলোচনা ও অ্যাগ্রিমেন্ট
...
ওয়েবসাইট আন্ডার কন্সট্রাকশান...
...
পঞ্চম ধাপ: ওয়েবসাইট বুঝে নেয়া

প্রথম ধাপ: কি ধরণের ওয়েবসাইট চাই, কি কি সুবিধা চাই

একটি ওয়েবসাইট বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আপনাকে (ডেভেলপমেন্টের ভাষায় আপনি হচ্ছেন ক্লায়েন্ট) প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে তা হলো ওয়েবসাইটটিতে কি কি সুযোগ সুবিধা বা ফিচার (Features) আপনি চাচ্ছেন। একজন ক্লায়েন্ট (Client)-এর প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট হলে এক এক রকম সুযোগ-সুবিধা থাকবে আবার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট হলে অন্যরকম সুযোগ-সুবিধা থাকবে। একজন ফটোগ্রাফারের ওয়েবসাইট হবে একরকম আবার একটি বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হবে আলাদা রকমের।

আপনার ওয়েবসাইটটিতে কি কি সুবিধা বা অপশন থাকতে হবে এমন ভাবনা বা চাহিদাগুলি একটি সাদা কাগজে তালিকাবদ্ধ করে ফেলুন। ডেভেলপারদের খটমটে ভাষায় একে ক্লায়েন্ট রিকয়ারমেন্ট (Client Requirements) বলে। একদম নিখুঁত টেকনিক্যাল রিকয়ারমেন্ট একজন নন-টেকনিক্যাল ক্লায়েন্ট-এর কাছে কেউ আশা করে না, কিন্তু অন্তত কি ধরণের ওয়েবসাইট হতে যাচ্ছে এবং এতে কি কি ফিচার বা সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে এটা আপনার ভাষায় খসরা করে ফেলুন। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা ওয়েব ডেভেলপার-এর দায়িত্ব।

আবার আপনি যদি নিজেই ওয়েবসাইটটি বানাতে চান তবুও সেই কাজটিও শুরু হবে এই প্রাথমিক রিকয়ারমেন্ট ঠিক করার মধ্য দিয়েই। অতএব রিকয়ারমেন্টগুলো মোটামুটি নিজের কাছে পরিস্কার করে ফেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতএব দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আগে আপনার জন্য ছোট্ট একটি অ্যাসাইনমেন্ট হচ্ছে একটা রিকয়ারমেন্ট লিস্ট বানিয়ে ফেলা।

দ্বিতীয় ধাপ: নিজে নাকি ওয়েব ডেভেলপার?

দ্বিতীয় ধাপটি খুব ছোট। তা হলো ওয়েবসাইটটি আপনি নিজে বানাতে চান নাকি কোন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপারকে দিয়ে বানিয়ে নিতে চান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। ওয়েবসাইটটি যদি আপনি নিজে বানাতে চান সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায় আপনি ওয়েবসাইট বানানোর বিষয়গুলোর ভেতর-বাহির সন্বন্ধে ওয়াকিবহাল। অতএব সেই দিকে যাব না। ধরে নিচ্ছি আপনি ওয়েবসাইটটি নিজে বানাতে চাননা। চলুন তবে তৃতীয় ধাপে যাওয়া যাক।

তৃতীয় ধাপ: ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ডোমেইন ও হোস্টিং 

এই ধাপে আপনার কাজ হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার মিনিমাম প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করা। ওয়েবসাইট বানানোর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন যে তিনটা মৌলিক বিষয় আমলে নিতে হয় তা হলো -
  • ৩.১. ওয়েবসাইটটি তৈরি করা (ওয়েবসাইট ডিজাইন / ডেভেলপমেন্ট) (Web Design & Development)
  • ৩.২. একটি ডোমেইন নেম রেজিষ্ট্রেশন করা (Domain Registration)
  • ৩.৩. ওয়েবসাইটটি একটি সার্ভারে হোস্ট বা আপলোড করা (Web Hosting)

তিনটা বিষয় নিয়ে সামান্য পড়াশোনা এখানেই করে নেয়া যাক-

৩.১. ওয়েবসাইটটি তৈরি করা (ওয়েবসাইট ডিজাইন / ডেভেলপমেন্ট)

ওয়েবসাইট তৈরি করা একটি উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল কাজ। এর জন্য প্রোগ্রামিং বা কোডিং জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কমপক্ষে এইচটিএমএল (HTML) ও সিএসএস (CSS) এর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। সেই সাথে জাভাস্ক্রিপ্ট (Javascript)-ও জানার প্রয়োজন পড়বে। এরপর আর একটু সামনে এগুলেই একটি সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ যেমন পিএইচপি (PHP) (এমন ল্যাংগুয়েজ আরও আছে) ও ডাটাবেজ (Database) (কুয়েরী ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন পড়বে। খুব কাটছাট করে হলেও এ কয়টা জিনিস জানার প্রয়োজন পড়বেই।

প্রোগ্রামিং (Programming) বা কোডিং (Coding) জ্ঞান ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি করার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনও হয়তো ইতিমধ্যেই আপনার চোখে পড়েছে, কিন্তু সেই কাজটি যে টুল (Tool) বা অ্যাপ্লিকেশন (Application) ব্যবহার করে করা হয় সেটিও কোন না কোন প্রোগ্রামিং ভাষা দ্বারাই তৈরি করা হয়েছে। এসব টুল বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব অবশ্যই, কিন্তু ডেভেলপমেন্ট-এর পুরোপুরি স্বাধীনতা ও স্বাদ পেতে হলে এবং ইচ্ছেমত কাজ করতে হলে প্রোগ্রামিং বা কোডিং জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

যাইহোক, আপনি নিজে না করে যদি কোন প্রফেশনাল ডিজাইনার/ডেভেলপারকে দিয়ে কাজটি করাতে চান তো সেক্ষেত্রে এই মাথাব্যথা ডেভেলপারের। আর আপনি নিজে করতে চাইলে প্রোগ্রামিং বা কোডিং ল্যাংগুয়েজগুলো জানতে হবে বা অথবা যে টুলস বা অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে চান সেটি সন্বন্ধেও সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে, ও তারপর সেগুলো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

এখানে এসে আপনার মনে হতে পারে যে - ভাই আপনি নিজে নিজে ওয়েবসাইট বানিয়ে নেয়াটাকে এতো জটিল করে বলছেন কেন? ভয় দেখাচ্ছেন নাকি, যেন আপনাকে দিয়ে সবাই ওয়েবসাইট বানিয়ে নেয়?

হা হা হা! আসলে ব্যপারটা সেরকম না। বরং নিজে করতে পারলে আপনার খরচ বাঁচবে এবং নতুন একটি বিষয় শেখাও হবে। নিজে নিজে করার আরেকটা ভালো দিক হলো ডেভেলপারদের পরিশ্রমটা আপনি কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারবেন... 😊।

আরও দুটি বিষয় হচ্ছে স্ট্যাটিক ও ডাইনামিক ওয়েবসাইটস্ট্যাটিক ওয়েবসাইট সাধারনত: কিছু পরিচিতিমূলক তথ্য দেখানোর জন্য ভালো। এই তথ্যগুলো খুব বেশি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়না। তথ্যগুলো সরাসরি হার্ড কোডেড অবস্থায় রাখা হয়, পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে ওয়েবসাইটের সোর্স ফাইলগুলো ওপেন করে এডিট করে নিতে হয়। ইউজার লগিন, কোন ধরণের ফর্ম সাবমিশন বা ব্যাকএন্ড ডাটাবেজ এই ধরণের ওয়েবসাইটে থাকে না। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট বানানোর খরচ তুলনামূলক কম, খুব একটা মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজনও হয় না। এই ধরণের ওয়েবসাইটের উদাহরণ হতে পারে একটি কোম্পানীর পরিচিতি মূলক ওয়েবসাইট, যেখানে প্রতিদিনই হয়তো নতুন তথ্য যোগ করার কোন প্রয়োজন নেই। যদিও স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট এখন আর তেমন দেখা যায়না বললেই চলে।
 
ডাইনামিক ওয়েবসাইটে ইউজার লগিন, কোন ধরণের ফর্ম সাবমিশন বা ব্যাকএন্ড ডাটাবেজ এই ধরণের সুবিধা থাকে এবং ইউজারের রিকোয়েস্ট অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রদর্শন করা হয়। ডাইনামিক ওয়েবসাইট সমূহের সাধরণত একটি ব্যাকএন্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশান প্যানেল তাকে, যেখান থেকে তথ্য যোগ বিয়োগ বা পরিবর্তনের কাজগুলো একজন সাধারণ ব্যবহারকারী সহজেই করতে পারে। এই ধরণের ওয়েবসাইটের উদাহরণ হতে পারে একটি নিউজপেপার ওয়েবসাইট, যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে বা বিয়োগ হচ্ছে। যদিও ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা তুলনামূলক ব্যয়বহুল, তবে ডেভেলপমেন্ট পরবর্তী তথ্য-আদানপ্রদানের কাজগুলো করা সহজ বিধায় বর্তমান পৃথিবীতে ডাইনামিক ওয়েবসাইটের কাজই বেশি হচ্ছে।
  

৩.২. একটি ডোমেইন নেম রেজিষ্ট্রেশন করা

ধরা যাক আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়ে গেছে। এবার আপনার একটি ডোমেইন নেম (Domain Name) বা ওয়েবসাইট ঠিকানা (Website Address) দরকার হবে। ডোমেইন নেম হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের নাম। যেমন www.facebook.com বা www.wikipedia.com – এখানে ফেসবুক বা উইকিপিডিয়া অংশগুলো হচ্ছে ওই ওয়েবসাইট গুলোর বহুল প্রচলিত নাম, বলা চলে ডাকনাম। আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের জন্যও এমন একটি চমৎকার নাম বেছে নিতে হবে আপনাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে নামটি যেন সহজ ও ছোট হয়। এবং নামটি অবশ্যই এমন হতে হবে যা ইতিমধ্যেই অন্য কেউ রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেনি। ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন করার ব্যপারে আপনাকে আপনার ডেভেলপার-ই সাহায্য করতে পারে অথবা এই কাজটি করে এমন কোন হোস্টিং কোম্পানীর সাথে আপনি নিজেও যোগাযোগ করতে পারেন।

৩.৩. ওয়েবসাইটটি একটি সার্ভারে হোস্ট বা আপলোড করা

হার্ডওয়্যার (Hardware) ছাড়া কম্পিউটারের কাছে সবকিছুই কিছু ফাইলের (Files) সমষ্ঠি ও এর ভেতরে লেখা থাকা কিছু নির্দেশনাসমূহ (Instructions)। একটি ওয়েবসাইট যখন বানাবেন তখন সেখানেও কিছু ফাইলের সৃষ্টি হবে, যার ভেতরে সোর্স কোড বা ইন্সট্রাকশনগুলি লেখা থাকে। এখন আপনার কম্পিউটারে রাখা ফাইল তো আর পৃথিবীব্যপী মানুষ দেখতে পাবে না, যদি তেমন ব্যবস্থা না করা হয়। সহজ উপায় হচ্ছে এক্ষেত্রেও কোন একটি হোস্টিং কোম্পানীর কাছে যাওয়া। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো তাদের ওয়েব সার্ভারে রাখতে পারি যেন পৃথিবীব্যাপী মানুষ আমার ওয়েবসাইটটি দেখতে পায়, এবং এই প্রকৃয়াটিকেই ওয়েবসাইট অনলাইনে হোস্ট করা বলে। এমন অনেক দেশি-বিদেশি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানী (Hosting Company) আছে। এ ব্যাপরেও আপনার ডেভেলপারই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে, অথবা আপনি নিজেই আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন কোম্পানির কাছে যেতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কোম্পানি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েবসাইট হোস্টিং - দুটি সার্ভিসই প্রদান করে থাকে।

তো মূলত তিনটি মৌলিক ব্যপার নিয়ে তো আলোচনা হলো। এছাড়াও আরও দুটি বিষয় আছে যা তর্কের খাতিরে হয়তো একেবারে প্রাথমিক বিষয় হিসেবে মর্যাদা না পেলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো:
  • ৩.৪. ওয়েবসাইট-এর কন্টেন্ট (Content)
  • ৩.৫. ওয়েবসাইট-এর সিকিউরিটি (Security) ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট (Tech Support)

৩.৪. ওয়েবসাইট-এর কন্টেন্ট

কন্টেন্ট-এর বিষয়টি অনেকেই ধর্তব্যের মধ্যে রাখেন না কিন্তু একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে যাওয়ার পর যখন অনলাইন-এ দেয়ার সময় আসে তখন এই প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট পাওয়া-ই সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কন্টেন্ট হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটটি সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য (লেখা, ছবি, ভিডিও, ইত্যাদি)। কন্টেন্ট সাধারণত ডেভেলপাররা তৈরি করে দেয় না, তারা বড়জোর ডেমো (Demo) কিছু কন্টেন্ট বসিয়ে তাদের কাজ সেরে নেয়, কিন্তু মূল কন্টেন্ট বা যাবতীয় তথ্য আপনাকেই জোগান দিতে হবে। এখন এই কন্টেন্ট যদি আপনি নিজে না দিতে পারেন তবে কন্টেন্ট বানিয়ে দেয়ারও বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যক্তি আছে, অথবা আপনার ডেভেলপারও আপনাকে এ ব্যপারে সাহায্য করতে পারে যদি সে সেটা করতে আগ্রহী থাকে এবং অ্যাগ্রিমেন্ট এ তা উল্লেখ করা থাকে।

৩.৫. ওয়েবসাইট-এর সিকিউরিটি ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট

একটি চলমান ওয়েবসাইট-এর জন্য বর্তমান জমানায় অন্যতম মাথাব্যথার বিষয় হচ্ছে এর সিকিউরিটি। এর কিছু ব্যপার হোস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রাতষ্ঠানের দেখভালের বিষয় আবার কিছু বিষয় আছে যা ওয়েবসাইটটি যে বা যারা পরিচালনা করবে তাদের উপর নির্ভর করে। সিকিউরিটি যদি ঠিক মতো না থাকে তবে আপনার সাইটটি হ্যাক হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক অনাকাংখিত যন্ত্রণার সৃষ্টি হতে পারে।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট-এর ব্যপারটি হলো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। এটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance) করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন নিয়মিত ব্যাকআপ (Backup) রাখা, নতুন তথ্য যোগ ও পুরানো তথ্য হালনাগাদ (Update) করা, সময় মত ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও হোস্টিং সার্ভিস রিনিউ (Renew) করা, নতুন কোন ফিচার বা সুবিধাদি যোগ করা, কোন বাগ (Bug) বা সমস্যা ধরা পড়লে সেগুলো সমাধান করা, ইত্যাদি। এর জন্য ওয়েবসাইট ডেলিভারি হয়ে যাওয়ার পড়েও সাপোর্ট-এর প্রয়োজন হয়। এই সাপোর্ট ফ্রি (Free) হতে পারে আবার পেইড (Paid)-ও হতে পারে, এটা নির্ভর করে ডেভেলপার-এর সাথে আপনার অ্যাগ্রিমেন্ট (Agreement)-এর উপর।

চতুর্থ ধাপ: আলোচনা ও অ্যাগ্রিমেন্ট

অনেক আলোচনা হলো। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ডোমেইন রেজিস্ট্রেশান, ওয়েব হোস্টিং নিয়ে পড়ােশোনাও শেষ। এবার শুরু হবে কাজ।

এবার প্রথম ধাপে আপনার বানানো রিকয়ারমেন্ট লিস্টটি নিয়ে ওয়েবসাইট ডেভেলপারের (Website Developer বা Web Developer) সাথে আলোচনায় বসুন। প্রাথমিকভাবে দু-তিনটি মিটিংয়েই ডেভেলপার আপনার কাছে আপনার আইডিয়া (Idea) বুঝে নিয়ে আপনাকে একটি প্রাথমিক ডিজাইন (Initial Design) বা ডেমো প্রদর্শন করবে। এরমধ্যে বাজেট, পেমেন্ট মাইলস্টোন (Payment Milestones), ডেভেলপমেন্টে টাইমলাইন (Timeline) ও ডেডলাইন (Deadline) নিয়েও আলোচনা হয়ে যাবে। চেষ্টা করবেন রিকয়ারমেন্টগুলো কাজের শুরুতেই যতটা সম্ভব পরিস্কার করে নেয়া, ডেমো ভার্সন ফাইনাল হওয়ার আগ পর্যন্ত যতবার পারুন যতটা পারুন নিজের চাহিদাগুলো ডেভেলপারের সাথে খোলাসা করে ফেলুন। মূল কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে বা কিংবা মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর রিকয়ারমেন্ট পরিবর্তন করাটা কখনো কখনো অনেক বড় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ও কাজটির উপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শেষে সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এবার ডেভেলপারের সাথে একটা লিখিত অ্যাগ্রিমেন্ট-এ যান অথবা ডেমো দেখুন। আগে ডেমো নাকি আগে অ্যাগ্রিমেন্ট - এটা নির্ভর করে ডেভেলপারের সাথে আপনার সম্পর্কের উপরে।

অ্যাগ্রিমেন্ট-এ অনেক কিছুই থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে, তবে মূল যে জিনিসগুলো উল্লেখ করা থাকে তা হলো -
  • কি ধরণের সাইট হবে এবং এবং কি কি ফিচার থাকবে
  • কি টেকনোলজি বা টুলস বা প্লাটফরম (Platform) ব্যবহার করা হবে
  • কি কি ডেলিভারেবলস্ (Deliverables) থাকবে
  • প্রোজেক্ট টাইমলাইন ও ডেলিভারি ডেডলাইন
  • ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও হোস্টিং কে প্রোভাইড করবে, কত দিনের জন্য
  • বাজেট বা কস্টিং, পেমেন্ট মেথড ও পেমেন্ট মাইলস্টোন
  • ডেভেলপমেন্ট পরবতী ট্রেইনিং / সাপোর্ট কিভাবে কি টার্মে কতদিন প্রোভাইড করা হবে, সেটা ফ্রি নাকি পেইড হবে, ফ্রি হলে কতদিন ফ্রি ইত্যাদি বিষয় সমূহ
  • উভয়পক্ষের সম্মতি ও সই-স্বাক্ষর

পঞ্চম ধাপ: ওয়েবসাইট বুঝে নেয়া

এই ধাপে ইতিমধ্যেই ডেভেলপার আপনার কাছে কাজ বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কাজ চলাকালীন এই সময়টায় নিয়মিত ডেভেলপারের সাথে যোগাযোগ রাখুন, অবশেষে কাজ হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইট বুঝে নিন। সাইটের ডেভেলপমেন্ট পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ-এর কাজ যদি আপনি নিজেই করতে চান সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের যাবতীয় লগিন ডিটেইলস বুঝে নিন। ওয়েবসাইটটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় টেইনিং-ও ডেভেলপারের কাছে নিয়ে নিতে পারেন।

এভাবে একটি ওয়েবসাইটের গর্বিত মালিক হউন! নিজের ফোন বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেসের সাথে সমানতালে ওয়েবসাইট ঠিকানাটিও সবার সাথে গর্বের সাথে শেয়ার করতে থাকুন।

বোনাস অংশ

পুরো লেখাটা পড়ার সময় যে প্রশ্নটি অনেকের মাথায় ঘুরতে থাকবে তা হলো – ভাই এই ওয়েবসাইট-এর ব্যাপার স্যাপার ফ্রিতে পাওয়া যাবে না?

আলবাৎ যাবে! এখন সময়টাই ফ্রি-এর সময়। প্রযুক্তির বাজারেও এই ফ্রি কালচারের বিশাল চাহিদা রয়েছে বৈকি। ওয়েবসাইটও ফ্রি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু……..।

এটি নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি নোট লিখে ফেলবো ইনশাআল্লাহ! সবুর করুন। সবুরে এ ধাক্কায় মেওয়া না ফললেও একেবারে খালি হাতে ফিরতে হবে না।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information & Commutation Technology) বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। নিউমেরিক (Numeric) ক্যালকুলেশন, ডাটা অ্যানালাইসিস ও তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন থেকে এর শুরু। কিন্তু বর্তমানে এটা এমন এক অবস্থায় এসে উপস্থিত হয়েছে যে মানব সভ্যতার কর্মযজ্ঞের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন এই প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য ব্যবহার হচ্ছে। যোগাযোগ থেকে বিনোদন, চিকিৎসা থেকে শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা থেকে উৎপাদন ব্যবস্থা কিংবা বাজার ব্যবস্থাপনা সবকিছুই এখন এই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সভ্যতার বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন যুগ পাড়ি দিয়ে অবশেষে সভ্যতা এখন ইনফরমেশন টেকনোলজির যুগ পাড়ি দিচ্ছে। তথ্যই এখন শক্তি।
 
এমতাবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত নানান শব্দের সাথে এখন আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি সবাই সুপরিচিত, যা ‍ঠিক ১০টি বছর আগেও ঠিক এমনটা ছিলো না। তেমনই দুটি শব্দ হচ্ছে -  ইন্টারনেট (Internet) ও ওয়েবসাইট (Website)।

ইন্টারনেট (Internet)
পৃথিবীব্যাপি বিস্তৃত কম্পিউটারের সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্ক (Network) হচ্ছে ইন্টারনেট। দু’টি কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান-প্রদান করার মধ্য দিয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ধারণা শুরু হলেও সময়ের পরিক্রমায় সেটাই পরিণত হয়েছে সুবিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্কে যেখানে এখন আর দু’টি বা তিনটি নয়, লক্ষ-লক্ষ কম্পিউটার বা ডিভাইস একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এই বিরাট নেটওয়ার্কই বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এই নেটওয়ার্কে এখন শুধু কম্পিউটারই নয় বরং আরও নানান রকম ডিভাইস (Device) সংযুক্ত, যেমন আপনার হাতের স্মার্টফোন বা আপনার ঘরের স্মার্টটিভি। এই ধরণের ডিভাইসগুলিতে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা মাত্রই তা এই বৃহৎ নেটওয়ার্কের অংশীদার হয়ে যাচ্ছে।

ওয়েবসাইট (Website)
শুধু কিছু যন্ত্র বা ডিভাইসের সংযোগ দ্বারা তৈরি সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্কই না, বরং ইন্টারনেট এখন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ তথ্যভান্ডার, অন্যতম জ্ঞানের উৎস ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমও বটে। আর এই সুবিশাল তথ্যভান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ওয়েবসাইট। একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে নানান তথ্যের সমাহার যা কিনা অন্য কোথাও কোন একটি কম্পিউটারে রাখা আছে। এই ধরণের কম্পিউটারকে আমরা আদর করে সার্ভার কম্পিউটার বা ওয়েব সার্ভার বলে ডাকি। অর্থাৎ অন্য একটি সার্ভার কম্পিউটারে কিছু কথা এমনভাবে সাজানো আছে যে একটি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটারে (বা মোবাইলে) বসে সেই তথ্যগুলি দেখতে পারছেন।

এখন, কি এই তথ্য? কেন এই তথ্য আমার দেখা প্রয়োজন?

শত শত বই মিলে যেমন একটি লাইব্রেরী গড়ে উঠে, তেমনি কোটি কোটি ওয়েবসাইট মিলে তৈরি হয়েছে এক বিশাল তথ্যের মহাসাগর যা একটি ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে মূহুর্তেই আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। এই তথ্য হতে পারে কারও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক অথবা ব্যবসায়িক তথ্য, হতে পারে পড়ালেখা অথবা গবেষণার তথ্য। এই তথ্য আবার নানান ধরণের হতে পারে, যেমন  টেক্সট, ছবি বা ইমেজ, অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন ইত্যাদি। বর্তমানে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নানান ওয়েবভিত্তিক সেবা প্রদানও সম্ভব হচ্ছে। যেমন অনলাইনের মাধ্যমে চাকুরীর আবেদন করা যাচ্ছে অথবা যোগাযোগ সম্পন্ন করা হচ্ছে (ই-মেইল, চ্যাটিং, ইত্যাদি), এমনকি অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পড়ালেখাও সম্ভব হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন আপনি এই মহাসাগরের অংশ হবেন? কি দরকার আপনার নিজের অহেতুক একটি ওয়েবসাইটের?

খুবই ন্যায্য প্রশ্ন। এর জন্য প্রথমেই বুঝতে হবে একটি ওয়েবসাইট আসলে কি করতে পারে আপনার জন্য।

প্রথমত আপনার নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট যদি থাকে তবে আপনিও সেই মহাসাগরের একটি অংশে পরিণত হবেন। আপনার নিজস্ব অস্তিত্ব-পরিচয়-ঠিকানা তৈরি হবে। নতুবা আপনার অবস্থান এই নেটওর্য়াকের বাহিরে। বাস্তব পৃথিবীতে একজন ঠিকানা পরিচয়হীন মানুষ যেমন, এই ভার্চুয়াল জগতেও আপনি তেমনই একজন ঠিকানা পরিচয়হীন মানুষ (বা প্রতিষ্ঠান)।
 
একটি দোকানের কথা চিন্তা করুন। দোকানটি সেখানে আছে, পণ্য সাজানো আছে, দোকানীও দাঁড়িয়ে আছেন পণ্য বিক্রয় করবার জন্য। কিন্তু দোকানটির কোন সাইনবোর্ড নেই, কোন নাম নেই, ঠিকানা লেখা নেই, যোগাযোগের কোন মাধ্যম উল্লেখ করা নেই, বিজনেস কার্ড নেই। এমন অবস্থায় দোকানি এবং কাস্টমারকে ঠিক কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে?

ওয়েবসাইট আপনার জন্য যা করতে পারে:
অতএব প্রথমেই বলতে হয়, ওয়েবসাইট আপনার বা আপনার ব্যবসার আধুনিক পরিচয় ও ঠিকানা। একজন মানুষ, বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি ঠিকানা থাকে, তা না হলে তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। ওয়েবসাইট ও এতে প্রদত্ত তথ্য-ও আপনার অস্তিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা তুলে ধরে।

কোন তথ্য প্রয়োজন হলে অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে জানতে চাইলে আমরা এখন প্রথমেই অনলাইনে বা ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকে। এখন আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের যদি কোনো ওয়েবসাইট না থাকে তবে কিভাবে মানুষ আপনাকে অনলাইনে খুঁজে পাবে? আর এভাবে হয়তো আপনি আপনার অজান্তেই সম্ভাব্য গ্রাহক হারাতে থাকবেন।

দ্বিতীয়ত, একটি ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার সেবা বা প্রতিষ্ঠানের সার্বক্ষণিক একটি বিজ্ঞাপন অথবা প্রধান মুখপাত্র।

আমরা জানি যে, ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট কখনো বন্ধ থাকে না, রাত দিন ২৪ ঘন্টা-ই এটা চালু থাকে। অতএব যে কেউ যে কোন সময় আপনার ওয়েবসাইটে এসে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে জানতে পারে, আপনার সার্ভিস অথবা পণ্যের ব্যপারে জানতে পারে, আপনার পূর্বের কাজ বা প্রোজেক্টসমূহ, কাজের সুনাম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে। রাত যদি হয় ৩টা, যখন কিনা আপনি গভীর ঘুমে বিভোর, প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তখনো এই কাজগুলি আপনার হয়ে আপনার ওয়েবসাইট করতে থাকবে। প্রয়োজনে সেই মানুষটি আপনাকে একটি একটি ইমেইল পাঠাতে পারে সরাসরি যোগাযোগ করবার জন্য। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ইমেইলটি পেয়ে যাবেন এবং উক্ত ব্যক্তিটির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন।

একটি ওয়েবসাইট থাকার ফলে যেসব সুবিধা আপনি পেতে পারেন:
  • সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘন্টা ওয়েবসাইট নিরবে তার সার্ভিস দিতে থাকে। আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন কর্মঠ ও ক্লান্তিহীন কর্মী আর কোথাও পাবেন না।
  • একটি ওয়েবসাইটি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের যেকোন মানুষ যেকোন সময় দেখতে পায়। অতএব পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই সারা পৃথিবী আপনার জন্য খোলা।
  • বর্তমান যুগে আপনার কোম্পানীর একটি ওয়েবসাইট আপনার সার্ভিসকে আরো স্মার্ট, মান সম্পন্ন করে তুলবে, আপনার ইমেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
  • বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যয় ধরে যদি তুলনা করা হয় তবে ওয়েবসাইট হচ্ছে প্রচারের অন্যতম সাশ্রয়ী একটি মাধ্যম। এমন কি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নতুন তথ্য, পণ্য বা সেবা তৎক্ষণাৎ অনলাইনে প্রচার শুরু করা সম্ভব নিজের ইচ্ছামত। রেডিও-টেলিভিশন-নিউজপেপারের অপেক্ষায় বসে থাকার কোন প্রয়োজন নেই, আর সেগুলোর খরচের কথা নাই-ই বা বললাম।
  • গ্রাহকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ওয়েবসাইট অপ্রতিদ্বন্দ্বী। উন্নত কাস্টমার সার্ভিস প্রদানে ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • একটি ওয়েবসাইট আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ব্র্যান্ড-এ পরিণত হয়। আপনার ওয়েবসাইটটি যদি তথ্যবহুল ও হালনাগাদ থাকে, তবে গ্রাহকদের কাছে আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। এবং এই তথ্য হালনাগাদ আপনি যে কোন সময়ই চাইলেই দ্রুততার সাথে করতে পারেন।
  • অনলাইনে সামাজিক আদান-প্রদান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অতএব অনলাইন জগতে আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি থাকা প্রচার-প্রসারের জন্য অত্যন্ত জরুরী। একটি চমৎকার ওয়েবসাইট এসব ক্ষেত্রে আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে।
  • বর্তমানে অনলাইনে নানাবিধ উপায়ে আয় করা সম্ভব। অনলাইন আয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
  • প্রয়োজনীয় ওয়েব অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড আপনি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে নিতে পারেন। যেমন অনলাইনে পণ্যের কেনা-বেচা, অনলাইন পয়েন্ট-অফ-সেলস, অ্যাকাউন্টিং -ইত্যাদি সফটওয়্যার বা অ্যাপলিকেশনের ব্যবহার।
এগুলো তো গেল মোটামুটি একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে মাথায় রেখে ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা তুলে ধরা। এখন আপনি যদি একজন ফটোগ্রাফার হন, অথবা গবেষক, হন একজন কবি/সাহিত্যিক/লেখক অথবা শিক্ষক, অথবা প্রচলিত বা অপ্রচলিত যে কোন পেশার মানুষ তাহলেও একটা ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার নিজস্ব কর্মপরিধি ও স্বকীয়তা তুলে ধরবার সর্বাধুনিক, সহজ, দৃষ্টিনন্দন অথচ সাশ্রয়ী মাধ্যম।

কি কি ধরণের ওয়েবসাইট হতে পারে:
  • ব্লগ ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
  • পোর্টফোলিও / বায়োডাটা / হবি (শখ) ওয়েবসাইট।
  • ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট / ব্রশিয়ার ওয়েবসাইট / ক্যাটালগ ওয়েবসাইট।
  • প্রতিষ্ঠানের পরিচিতিমূলক ওয়েবসাইট।
  • জব বোর্ড / জব পোর্টাল।
  • অনলাইন ডিরেক্টরী।
  • প্রশ্নত্তর ওয়েবসাইট।
  • ই-কমার্স ওয়েবসাইট / কোন সার্ভিস প্রদানমূল ওয়েবসাইট।
  • অলাভজনক / ধর্মীয় ওয়েবসাইট।
  • গবেষণাপত্র প্রকাশের ওয়েবসাইট।
  • বিনোদনমূলক ও যোগাযোগের ওয়েবসাইট।
  • অনলাইন কমিউনিটি ওয়েবসাইট / সোস্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট।
  • নলেজবেস / উইকি ওয়েবসাইট।
  • স্কুল / কলেজ ওয়েবসাইট।
  • টিউটোরিয়াল ওয়েবসাইট।
  • অ্যাকাউন্টিং / পে-রোল / অফিস ব্যবস্থাপনা ওয়েবসাইট।...
...আসলে এতো ধরণের ওয়েবসাইট আছে যে যার তুলনায় এই তালিকা অতি নগণ্যই বলা যায়। ওয়েবসাইটের কোন বাঁধাধরা শ্রেণিবিভাগ বা ধরণ নেই। নিত্যদিন নানান ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে। হয়তো নতুন কোন ধরণের আইডিয়া এলো আপনার মনে, যা একজন ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপারের সহায়তায় সফলভাবে বাস্তবে রূপ নিতে পারে, হয়ে উঠতে পারে জনপ্রিয়। এই যে আজকের ফেসবুক, ছেলে-বুড়ো সবার কাছে জনপ্রিয়, সেটা মার্ক জুকারবার্গের হাত ধরে কিভাবে তৈরি হয়েছে সেই গল্পটা তো আমাদের সবারই জানা, তাই না!

সময়ের পরিক্রমায় ব্যবসায়িক, প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তিগত, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা ইত্যাদি কাজে ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সহ বিশ্বের সকল দেশে ওয়েবসাইট এর চাহিদা বাড়ছে। প্রয়োজনের ধরণ, সেবা বা অন্যান্য বিষয়ের উপরে নির্ভর করে সাধারণত ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়ে থাকে। একটি ভালমানের ওয়েব সাইট খুব দ্রুত মানুষের কাছে পৌছে যেতে পারে। প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে, সহজলভ্য ও জনপ্রিয় হচ্ছে, তেমনটা হলে এমন একটা সময় আসবে, যখন প্রতিটি মানুষের কমপক্ষে একটি করে নিজের ওয়েবসাইট থাকবে, একটি মোবাইল নম্বর অথবা একটি ই.মেইল ঠিকানার মত একটি ওয়েবসাইট থাকাও অত্যাবশকীয় হয়ে উঠবে - এটা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না মোটেও।

ইন্টারনেট পুরো বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। আর আপনার অথবা আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি ওয়েবসাইট আপনাকে নিয়ে যাবে একদম খোলা বিশ্বমঞ্চে!